logo
Sunday , 5 February 2023
  1. সকল নিউজ

রপ্তানির পোশাক চুরি করে কোটি টাকার বাড়ি-খামার

প্রতিবেদক
admin
February 5, 2023 9:21 am

গাজীপুরের কারখানা থেকে গত বছরের ২৯ অক্টোবর কাভার্ড ভ্যানে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। পরের দিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায়। সেই মোতাবেক বন্দর থেকে চালানবহনকারী জাহাজটি রওনা দেওয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করেন। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া একটি ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যায় গার্মেন্টস মালিকপক্ষ। সেখানে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি। অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয়েছে মালিকপক্ষকে। এ ঘটনায় গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় সাধারণ ডায়ারি (জিডি) করা হয়।

এই অভিযোগের রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‍্যাব। পরে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানি করা চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোর চক্রের হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে র‍্যাব-৪-এর পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে তারা গ্রেফতার হন। কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দুপুরে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতাররা হলেন—শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা, মো. ইমারত হোসেন সজল, শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ ও মো. হৃদয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় চুরি যাওয়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ড ভ্যান।

র‍্যাব জানায়, শাহেদ চক্র গত দেড় যুগ ধরে এভাবে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল। চুরির টাকায় শাহেদের প্রায় ২০ কোটি টাকার একটি বাড়ি করেছেন। এছাড়া মৌলভীবাজারের দুর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির ওপরে রয়েছে মাছের খামারসহ দুটি হাঁস ও মুরগির খামার। খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেফতার শাহেদ এই গার্মেন্টস পণ্য চুরি চক্রের হোতা এবং নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। ৪০-৫০ জনের এই চক্রে রয়েছে ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল কর্মী। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ট্রান্সপোর্টে গার্মেন্টেসের মালামাল বহন শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে এবং অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে উত্সাহিত করেন। গার্মেন্টস থেকে রপ্তানির জন্য পণ্য রওনা হওয়ার পর চক্রটি চুরির কাজ শুরু করে। যানবাহন থেকে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে প্যাকেজিংয়ের পর তারা আবার বন্দরে পাঠিয়ে দেয়।’

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গ্রেফতার শাহেদ চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে দুইটি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে চারটি কাভার্ড ভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করেন। সে কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির কার্যক্রমের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র তৈরি করেন। বর্তমানে তার নিজস্ব চারটি কাভার্ড ভ্যানসহ চোর চক্রে মোট ১৫টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে। যার অধিকাংশ মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আদালতে ছয়টি মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ