logo
Saturday , 9 July 2022
  1. সকল নিউজ

ঈদের ছুটি নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকছে রাজধানী

প্রতিবেদক
admin
July 9, 2022 1:49 pm

পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকছে রাজধানী। নগরীতে নাশকতার কোন আশঙ্কা না থাকলেও সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন। ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে যাতে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো কোনো অঘটন না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে তাদের।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে অন্তত চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে উিউটি থাকবে পুলিশের। তৎপর থাকবে পুলিশের অন্যান্য ইউনিট। অব্যাহত থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গরুর হাটের নিরাপত্তা, নাড়ির টানে ফেরা মানুষ যাতে সড়কে ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখা, রাজধানীতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট রয়েছেন তারা।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আপনাদের সহযোগিতা আমি চাই। তাদের সঙ্গে ভালোভাবে ব্যবহার করবেন এবং তাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে থানা পুলিশের পাশাপাশি অন্তত তিন হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে বিভিন্ন বেশে।

জানা গেছে, ঈদের জামায়াত ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টিকে ঠেকাতেও। এছাড়া শপিংমলগুলোতে কোনো নারী যেন যৌন হয়রানির শিকার না হন সেদিকেও বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো ডিএমপি থেকে সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারও অস্বাভাবিক চলাচল দেখলেই নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও জানায়, রাজধানীসহ এক জেলা থেকে অন্য জেলার প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ভার্চুয়াল জগতেও চলছে নজরদারি। অনলাইনে গুজব, উসকানি বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে সজাগ রয়েছে সাইবার মনিটরিং টিম। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতেও।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, নগরবাসী তাদের সুবিধামতো স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে পারবেন। পুলিশ নগরবাসীর নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত আছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ডিএমপি কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদুল আজহায় আমাদের মূলত চ্যালেঞ্জ থাকে গরুর হাট ব্যবস্থাপনা এবং মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঢাকা শহর ত্যাগ করতে পারে তা নিয়ে। এখন পর্যন্ত আমাদের গরুর হাটের ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। এখন পর্যন্ত গরুর হাটে কোনো অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি বা ছিনতাইয়ের মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
কমিশনার বলেন, অধিকাংশ ঢাকাবাসী আজ থেকে কুরবানির পশু ক্রয় শুরু করবে। এবার অনলাইনে অনেক কুরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে, তাই হাটগুলোতে ভিড় তুলনামূলক কিছুটা কম। যারা হাটে কুরবানির পশু কিনতে যাবেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থাকবে।

ঈদগাহে মোবাইল ডিভাইস নিয়ে আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যদি মোবাইল নিয়ে আসেন তাহলে পাঞ্জাবির পকেটে না রেখে হাতে মোবাইল রাখবেন। ব্যাগ আনা যাবে না, তবে বৃষ্টির কারণে ছাতা আনা যাবে। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সবাইকে মাস্ক পরে ঈদগাহে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ঈদে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, কখনোই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনলাইনে তাদের তৎপরতা আছে। কারণ, জঙ্গিরা কখনই বসে থাকে না। সাইবার স্পেসে তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। শিয়া সম্প্রদায়, মাজার ভিত্তিক, পীরদের আস্তানা বা উপাসনালয়কেন্দ্রিক যেখানে ঈদের বড় জামাত হয় সেসব জায়গায় জঙ্গিদের টার্গেট থাকে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। সেসব জায়গায় আমাদের আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

ঈদকে সামনে রেখে লাখ লাখ নগরবাসী আবাসিক এলাকা, বাসা, ফ্ল্যাট খালি রেখে গ্রামে চলে যান। এসব আবাসিক এলাকাগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যাদের বাসাবাড়িতে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে সেগুলো বিশেষ নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করে যাওয়ার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।

এদিকে শুক্রবার বিকালে গাবতলীতে গরুর হাটের নিরাপত্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন বলেন, গরুর হাটের নিরাপত্তা, রাজধানীর নিরাপত্তা, যাত্রাপথে মানুষ যাতে দুর্ভোগ ছাড়া পৌঁছাতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে র‌্যাব কাজ করছে। সকাল থেকে গাবতলীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তের মেশিন বসানো হয়েছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের তালিকা করে তাদের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে। অনলাইনে পশু কেনাকাটার হাটেও সাইবার নজরদারি রয়েছে র‌্যাবের।

তিনি বলেন, ঈদকেন্দ্রিক কোনো চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলমপার্টি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে র‌্যাব। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আপনাদের সহানুভূতি আমি চাই। তাদের সঙ্গে ভালোভাবে ব্যবহার করবেন এবং তাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। আমরা সেটাই চাই। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ঢাকা শহরের মানুষ বাড়ি যাওয়া ও আসার বিড়ম্বনা থেকে অনেক সময় অনেকটাই নিরাপদে থাকেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আপনারা সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সবাই সবাইকে নিয়েই ঈদের আনন্দ ও উৎসব পালন করবেন। এটাই আমরা আশা করি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হয়েছে। আমরা সবাই মিলে সব আনন্দ ভাগাভাগি করব। ঈদের আনন্দ, পূজার আনন্দ, বড়দিনের আনন্দ। এটাই হোক আমাদের উদ্দেশ্য।

সর্বশেষ - সকল নিউজ