logo
Saturday , 14 May 2022
  1. সকল নিউজ

পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের সম্পদের পাহাড়

প্রতিবেদক
admin
May 14, 2022 10:32 am

কানাডার পর এবার ভারতে পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) পাচার করা টাকায় গড়া বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি ও কয়েকশ বিঘা মূল্যবান সম্পত্তি। বিভিন্ন জেলায় বেআইনি আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে।

শুক্রবার ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অভিযানে এসব সম্পদের সন্ধান পায়। কলকাতা, দমদম, রাজারহাট, অশোকনগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনাসহ পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৯ জায়গায় একযোগে চালানো হয় তল্লাশি।

এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে চার বিঘা জমির ওপর সুরম্য বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে। অভিযানের সময়ে বাড়িটি ছিল তালাবদ্ধ। এ শহরেই আরও তিনটি বাড়ির সন্ধান মিলেছে। অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার ইএম বাইপাসসংলগ্ন এলাকা, একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে।

নজরদারিতে আছে আরও কয়েকটি ফ্ল্যাট ও হোটেল। ইডির দাবি, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকায় এসব জমি কিনেছেন পিকে হালদার ও তার সহকারী সুকুমার মৃধা। অভিযানের সময় এসব বাড়ি থেকে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

পিকে হালদারের সম্পদের খোঁজ নিতে সম্প্রতি ভারতের ইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া পিকে হালদারের সম্পদ পাচারের তথ্য ইডিকে দেয় দুদক।

এরপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারের সম্পদের পাহাড়ের সন্ধান পায় সংস্থাটি। এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে শিগগিরই ভারতে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠাবে দুদক।

জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে দুদক থেকে ইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ইডি ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে বলে তারা শুনেছেন। এখন পর্যন্ত ইডি ফরমালি পিকে হালদারের সম্পদের বিষয়ে আমাদের কিছু তথ্য জানায়নি। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের কাছ থেকে তথ্য পাব। নয়তো শিগগিরই তথ্য চেয়ে ভারতে এমএলএআর পাঠানো হবে।

এদিকে ভারতে পিকে হালদারের সম্পদের খোঁজে অভিযানের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়। সীমান্ত লাগোয়া অশোকনগর, দমদম, বাইপাস লাগোয়া একাধিক জোনে চলে তল্লাশি। এর মধ্যে শুধু অশোকনগরেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা টাকায় তৈরি তিনটি বাড়িতে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা তল্লাশিতে নামেন। এ সময় ইডির আধিকারিকা তদন্তের জন্য স্বপন মিত্র নামের একজনকে আটক করে।

শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত সরকার এ অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পিকে হালদার বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আর সুকুমার মৃধা পশ্চিমবঙ্গে মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন। তিনি পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন।

পিকে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। পিকে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি ৩৪টি মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলায় দুই হাজার কোটি টাকার ওপর আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ (জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি) ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ জন আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

এছাড়া এসব মামলায় আদালতে ১১ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের এ মামলায় গত বছরের জানুয়ারিতে পিকে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ওই সময়ে দুদক জানায়, পিকে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার ও অনিন্দতা। মৃধা পিকে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার মৃধা। হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অবৈধ টাকায় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সম্পত্তি কেনার অভিযোগ আছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে।

ইডির সূত্রে খবর, সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসার আড়ালে পাচারের টাকায় ভারতের বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছে। অশোকনগরে একাধিক বাড়ি ও দোকান আছে এই সুকুমার মৃধার। প্রশান্ত কুমার হালদার তার মারফত এ দেশে টাকা নিয়ে আসে। এদিন অশোকনগরে সুকুমার মৃধাসহ প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্রর বাড়িতেও হানা দেন ইডির কর্মকর্তারা।

জানা যায়, পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা প্রকৃতপক্ষে ভারতে অশোকনগরের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী। এতেই ইডির কাছে প্রায় স্পষ্ট দুজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশেই এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এই বিপুল আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। ওই অঞ্চলে পিকে হালদারের নবজীবন পল্লীতে সুবিশাল বিলাসবহুল বাগানবাড়ি আছে। ঠিক তার পাশেই আছে সুকুমার মৃধার আরেক বিলাসবহুল বাগান বাড়ি। সুকুমার একজন মাছ ব্যবসায়ী হিসাবে সেখানে পরিচিত হলেও তার আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ছিল এলাকাবাসীর মধ্যে।

শুক্রবার) ইডির তদন্ত সূত্রে জানা যায়, শুধু অশোকনগরে একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন পিকে হালদার এবং সুকুমার মৃধা। এদিন অশোকনগরের ৩টি বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে সংস্থাটি। যার একটিতে থাকতেন সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতার জামাই। তাকে জেরা করা হয়। অন্যদিকে অশোকনগরের বিলাসবহুল বাড়িতে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার ও তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা করে সংস্থার কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানতেন, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী। তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসাবে কর্মরত। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির কারণে তারাও ছিল ইডির নজরে। তাদের চার বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়িটি এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এনআরবি গ্লোবালের বেআইনি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে ইডির ধারণা।

সূত্র আরও জানা যায়, কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই এবং ভারতের অন্যান্য শহরেও পিকে হালদার এবং সুকুমার জুটির বিনিয়োগ আছে বলে ধারণা করছে ইডি। আপাতত এ দুই পরিবারকে জেরা করে সেই সম্পত্তির খুঁজছে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় এই সংস্থা।

সুকুমার মৃধার সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচারের যে টাকা এ দেশে আসত, তা খাটানো হতো একাধিক ব্যবসায়। আর এভাবেই এ দেশেও জেঁকে ব্যবসা শুরু করেছেন সুকুমার মৃধা।

মৃধা ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কার্যকলাপও ইডির নজরদারিতে আছে। অশোকনগরে সুকুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সেই নথি প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকেও পাঠানো হবে। গোটা চক্রের হদিস পেতে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

সর্বশেষ - সকল নিউজ