logo
Thursday , 18 May 2023
  1. সকল নিউজ

পাহাড়ে নতুন আতঙ্ক কেএনএ

প্রতিবেদক
admin
May 18, 2023 10:15 am

পাহাড়ে নতুন আতঙ্কের নাম কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। এটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একটি সামরিক শাখা।

গত বছরের এপ্রিল মাসে কেএনএফ বান্দরবানে আত্মপ্রকাশ করে। জানা যায়, কেএনএফ-এর সামরিক শাখা কেএনএ-এর শতাধিক সদস্য তিন বছর আগে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে যায়। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। এই দলের সদস্যরাই এখন সেনাবাহিনীর ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

কেএনএফ-এর প্রধান হলেন নাথান বম। তিনি রুমা উপজেলার এডেনপাড়ার অধিবাসী। নাথান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। রুমার এডেনপাড়ায় কুকি চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তবে বর্তমানে নাথান বম কোথায় আছেন, সেটি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, তিনি ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছেন।

আত্মপ্রকাশের পর কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে। সংগঠনটি মূলত বম জনগোষ্ঠীনির্ভর হলেও তাদের দাবি, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। এগুলো হলো-বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি।

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখা কুকি চিন আর্মি (কেএনএ) পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেএনএ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে চলেছে। সেনাবাহিনীর সড়ক উন্নয়ন কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে নির্মাণকাজের শ্রমিক-ঠিকাদারদের অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করেছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানান, নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কিছু তরুণকে সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ও রসদ জোগাচ্ছে এই কেএনএফের সামরিক শাখা কেএনএ। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছে।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, পাহাড়ের নতুন আতঙ্ক হলো কেএনএফ এবং এর সামরিক শাখা কেএনএ। এরা গোষ্ঠী বা গোত্রভিত্তিক কথাবার্তা বলে পাহাড়কে নতুনভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সংগঠনটি স্বশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতাসহ একটি ছোট আলাদা রাজ্য বানাতে চায়। ভিনদেশির পরামর্শে স্থানীয় মুষ্টিমেয় সাধারণ পাহাড়িদের ব্যবহার করে বান্দরবান ও রাঙামাটির কিছু এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা। সংগঠনটির অত্যাচার ও নির্যাতনে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার অনেকগুলো গ্রামের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তিনটি উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়ে লেখাপড়া করতে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি-এই তিন উপজেলায় অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই তিন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে রুখতে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে, ভিন্নপথ অবলম্বন করতে হবে সরকারকে। এরা সার্বভৌমত্ব ও সেনাবাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে নির্বাচন। দুর্গমাঞ্চলের মানুষরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা-তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিবাদের নতুন ক্ষেত্র হলো বান্দরবান। নেপথ্যে মূলত চাঁদাবাজি। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও গুলি করে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর চাঁদাবাজিতে থমকে গেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পার্বত্যবাসীর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূলে পাহাড়ে সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা জরুরি হয়ে পড়েছে। সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন আর্মি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সেনাবাহিনীর জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেএনএ সন্ত্রাসীরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একের পর এক সেনাবাহিনীর টহল টিমের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’

গত ১৩ মার্চ কেএনএ সন্ত্রাসীদের হামলায় সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন সেনাসদস্য রাকিবুল ইসলাম ও শিশির আহমেদ। এ ছাড়া কেএনএ সন্ত্রাসীরা আরেক সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।

সেনাবাহিনীকে আগের মতো ক্ষমতা দেওয়া হোক-মেজর জেনারেল ইব্রাহীম : পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, বীরপ্রতীক যুগান্তরকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ১৯৯৭ সালের আগে ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর যে ধরনের কর্তৃত্ব ছিল অনুরূপ কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা মোটেই ঠিক হয়নি। বর্তমান অবনতিশীল পরিস্থিতির জন্য সেনা প্রত্যাহারই মূলত দায়ী। সেখান থেকে সেনাবাহিনী কমিয়ে অন্যান্য প্যারামিলেটারি বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়াও ঠিক হয়নি। এর ফলে দেশের নিরাপত্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সে কারণে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আগেই দায়িত্বটা সেনাবাহিনীকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বদিকে ভারতের মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। মিজোরামের নিচে এবং রাখাইনের ওপরে হলো মিয়ানমারের অন্যান্য প্রদেশ। এই পুরো অঞ্চলটাই সংঘাতপূর্ণ সম্পর্শকাতর। এ অঞ্চলটি দিয়ে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান হয়। এখানে অনেক ধরনের উপজাতির বসবাস। যেমন চিন, কুকি, রাখাইন, মিজো, বর্মণ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আশির দশক থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যাপক কাজ হয়েছে। ১৯৯৭ সালে একটি শান্তিচুক্তি হয়। কিন্তু শান্তিচুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু অংশ বাদ আছে। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। শুধু সংকুচিত নয়, প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার দাবি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা বর্তমানের চেয়ে আরও খারাপ হওয়ার আগে ১৯৯৭ সালের আগে সেনাবাহিনী যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেভাবে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

এই মুহূর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকটময় পরিস্থিতি তুলে ধরে জেনারেল ইব্রাহীম বলেন, মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত বেড়েছে। সেখানে জাতিগত সংঘাতে যারা লিপ্ত তারা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশিরা তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে। অস্ত্র প্রশিক্ষণও পায়। পাবর্ত্য অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সুবিধা হলো সেখানে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড স্তিমিত। এ সুযোগটাই নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

 

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত

মেট্রো স্টেশন যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানতে পারছি না : প্রধানমন্ত্রী

রূপপুরের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি আসবে সেপ্টেম্বরে

গণকমিশনের ভিত্তি নেই, বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল বিএনপি

সৌদি পৌঁছেছেন ৯৬ হাজার ৯১৯ হজযাত্রী, ২২ জনের মৃত্যু

দুর্নীতিবাজদের তালিকা করলে প্রথমে বিএনপি নেতাদের নাম আসবে : সেতুমন্ত্রী

২০৩৬ পর্যন্ত বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির কর মওকুফ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ৩ সেতুর টোল না নেওয়ার প্রস্তাব

টেকনাফ সীমান্তে গুলি-মর্টার শেলের আওয়াজ, ঘুম ভাঙল আতঙ্কে

শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ: দ্য ইকোনমিস্ট