তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নার্স ও কর্মচারীরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
জানা গেছে, গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের স্বামী রোগী দেখানোর উদ্দেশ্যে বহির্বিভাগে আসেন। তাকে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ সন্দেহে চতুর্থ শ্রেণীর কয়েকজন কর্মচারী পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় না দিয়ে কড়া ভাষায় উল্টো কর্মচারীদের পরিচয় জানতে চান। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরুর একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়।
পরে এর প্রতিবাদে নার্সরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং অভিযুক্ত কর্মচারীদের শাস্তি দাবি করেন। এ ঘটনায় প্রশাসন চার কর্মচারীকে বরখাস্তের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। তবে হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।
নার্স-কর্মচারীদের এরকম যুদ্ধংদেহি মনোভাব এর আগেও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রশ্ন হল, একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকেও তারা কেন পরস্পর পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবেন? এতে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিকতায় বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি অসহায় রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।
চিকিৎসাসেবা হল একটি মানবিক পেশা। এ পেশা-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীরা সেবার ক্ষেত্রে যেমন মানবিক হবেন, তেমনি আচরণেও তাদের মানবিকতা ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
তারা নিজেরাই যদি একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভেবে যুদ্ধের দামামা বাজাতে থাকেন, তাহলে মানুষ ভরসা করবে কাদের ওপর? কোনো অবস্থাতেই হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ও চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।
প্রতিদিন অজস্র রোগী আরোগ্য লাভের আশায় এ হাসপাতালে ভিড় জমান। তাদের মধ্যে দরিদ্র শ্রেণীর লোকজনই বেশি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তারা যদি চিকিৎসা সুবিধা থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়েন, তাহলে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। নার্স-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে হাসপাতালটিতে মূলত এ চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে।
রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে নিঃসন্দেহে অসহায়বোধ করেছেন, যাদের মধ্যে হয়তো অনেক মুমূর্ষু রোগীও ছিল। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে আশার প্রদীপ হয়ে মানুষের মনে যে প্রতিষ্ঠানটির অধিষ্ঠান- তার নাম হাসপাতাল।
রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তিলাভের প্রত্যাশায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসে। হাসপাতালে কর্মরত সবাইকে রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার মূল্য দিতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে যারা আসবেন, তাদেরও কথায়-আচরণে সংযম ও সৌজন্যবোধের পরিচয় দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।