সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক তবে সড়কে সতর্ক পাহারা


admin প্রকাশের সময় : জুলাই ২৫, ২০২৪, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন | 502
সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক তবে সড়কে সতর্ক পাহারা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতির পঞ্চম দিনে গতকাল বুধবার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আরো অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয় সড়কের।

সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক সড়কে সতর্ক পাহারাগতকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখার বিষয়ে আগের দিন প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

 

এ সময়ের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত কয়েক দিন সারা দেশে দুর্বৃত্তরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জারি করা হয় কারফিউ। তবে চলমান এই কারফিউয়ের সময় ক্রমে শিথিল করছে সরকার।

 

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকালও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল করার পর আবারও কারফিউ বহাল করা হয়। আজ বৃহস্পতিবারও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল করার পর একইভাবে কারফিউ বহাল থাকবে।

এর আগে চলমান নাশকতা, সহিংসতার কারণে গত রবিবার ও সোমবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এতে মঙ্গলবারও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোনো সংঘাত-সহিংসতা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। অফিস খুলে দেওয়ায় সড়কে বিপুলভাবে যানবাহন বেড়েছে। সার্বিক পরিবেশ শান্ত ছিল।

তবে বিকেল ৫টার পর কিছুটা বিপত্তি ঘটে। যানজটে পড়ে তখনো সড়কে অনেক যানবাহন আটকা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়। এ সময় সব গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। 

এদিকে গত কয়েক দিনের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতচিহ্ন ক্রমে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সড়ক থেকে সরানো হয়েছে বেশির ভাগ ধ্বংসস্তূপ। গতকাল রাজধানীর সড়কে ছিল বিপুল যানবাহন। খোলা ছিল বেশির ভাগ ফুটপাতের দোকান। সাধারণ মানুষ অনেকটা ভয়হীন ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ে পথে পথে চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হয়। কারফিউ বলবৎ থাকায় সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। সব মিলে বেশির ভাগ এলাকা ছিল শান্তিপূর্ণ। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

কারফিউ থাকবে

এদিকে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউ অব্যাহত থাকছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (সাত ঘণ্টা) কারফিউ শিথিল থাকবে।

এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রথম দফায় গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শনিবার দুপুর ২টা থেকে আবার কারফিউ শুরু হয়। গত রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়। গত সোমবারও তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ অব্যাহত ছিল। গতকাল মঙ্গলবারও কারফিউ অব্যাহত ছিল।

শিথিল কারফিউতে অফিস খুলেছে

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও সংঘাতের পর গতকাল কারফিউ ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিথিল ছিল। সকাল থেকে কারফিউ শিথিল থাকায় গতকাল অফিস-আদালত, ব্যাংক খুলেছে, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করেছে। কারফিউয়ের মধ্যে অফিস চলবে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নাশকতাকারীদের তথ্য চাইল পুলিশ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীদের সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল এক বার্তায় এ অনুরোধ জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাশকতা সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে তথ্য এবং অপরাধীদের নাশকতার সময়ের ছবি/ভিডিও ফুটেজ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহযোগিতা করুন। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য দেওয়ার জন্য ০১৩২০০০১২২২, ০১৩২০০০১২২৩ এই দুটি নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়।

নাশকতাকারীদের ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার : বিপ্লব সরকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নাম করে যারা নাশকতা ও সহিংসতার সৃষ্টি করেছে, তাদের ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার। কোনো নিরপরাধ লোক যেন জেলে না ঢোকে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিশ্লেষণ করছে এবং যারা প্রকৃত সন্ত্রাসী তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গতকাল ডিএমপি সদর দপ্তরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মিরপুর-১০-এ ধ্বংসযজ্ঞের তদন্ত শুরু

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত কয়েক দিন মিরপুর এলাকায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার তদন্ত শুরু করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গতকাল এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। গতকাল পুলিশ সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নতুন মৃত্যু নেই, ৬ লাশ আঞ্জুমানে

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এক হাজার ১১৭ জন। মারা যাওয়া ৮৬ জনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ৮০ জনের লাশ এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ছয়টি লাশ গতকাল আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে পাঠানো হয়েছে।