logo
Monday , 15 January 2024
  1. সকল নিউজ

বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটে!

প্রতিবেদক
admin
January 15, 2024 11:21 am

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তাদের সেই আন্দোলনে যোগ দেয় সমমনা দলগুলো। এক দফা দাবি আদায়ে বেশ কয়েক দফা হরতাল-অবরোধ পালন করে দলগুলো। কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করেই সংবিধান অনুযায়ী গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরও আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে নির্বাচনের পর দলীয় কর্মসূচি নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে দলটি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণের জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। আবার এই নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্পষ্ট পদক্ষেপের’ আশাও করছেন দলটির নেতারা। বিএনপির অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ‘স্পষ্ট পদক্ষেপের’ আগ পর্যন্ত নরম কর্মসূচিতেই সময় পার করার আলোচনা থাকলেও নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন, কর্মসূচি নিয়ে কোনো সংকট নেই। চলমান কর্মসূচির মাধ্যমেই তাদের কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ হবে।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত মহাসমাবেশ পুলিশের অভিযানে পণ্ড হয়ে যায়। ওইদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় দলটির নেতাকর্মীদের।

এরপর থেকে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ১২ ধাপে ২৪ দিনের অবরোধ এবং পাঁচ ধাপে ছয়দিনের হরতালসহ ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া যেমন ছিল না, তেমনি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল খুব নগণ্য। এর মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা ভীষণভাবে প্রকাশ পায়।

ফলে প্রথমদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধের কথা ভাবলেও পরে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জনসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার এবং তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ‘অসহযোগ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এর মধ্যেই ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানালেও তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। তাদের দাবি, জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোটদানে বিরত ছিল। ফলে নির্বাচনপরবর্তীতে এখন সাধারণ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিফলেট বিতরণ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি বিএনপির হাইকমান্ড সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। আগামী দিনের জন্য কৌশল প্রণয়নের জন্য মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে বৈঠক। এসব বৈঠকে গত কয়েক মাসে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের জামিন নিশ্চিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ এবং সমমনা দলগুলোর সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘসহ পশ্চিমাবিশ্ব সাম্প্রতিক নির্বাচনের ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে জোরালো প্রতিক্রিয়া এলে মাঠের আন্দোলনে জোরালো কর্মসূচি দেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত নমনীয় কর্মসূচিতে থাকার কথাই ভাবা হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে নির্বাচনপরবর্তী কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করার ক্ষেত্রে বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতার অভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। কর্মসূচি নিয়ে ধোঁয়াশা কাজ করছে তাদের মধ্যে।

এ বিষয়ে যশোরের মণিরামপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির কথা শুনেছিলাম। নেতারা বলছিলেন নির্বাচনের পর কঠোর আন্দোলন হবে। এখন পর্যন্ত সেই কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি না। কেন হচ্ছে না সেটাও বুঝতে পারছি না।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে ডামি নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। তামাশার নির্বাচন বাতিল ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়নি। বিএনপিসহ ৬৩টি দল বর্জন করেছে, তারপরও নির্বাচনে অনিয়ম-জালিয়াতি করেছে। জনগণকে শিকারে পরিণত করে ক্ষমতাসীনরা যে আনন্দ করছে, তাদের পরাজয়ের মধ্যদিয়ে তা করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। আন্দোলনের স্রোতে তারা পরাজিত হবে। কখন কোন পরিস্থিতি হবে তা বলা না গেলেও জনগণের আন্দোলন বৃথা যাবে না।’

আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সংকট রয়েছে- এমন কথা মানতে নারাজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, ‘দলের কর্মসূচি প্রণয়নে কোনো সংকট নেই। কর্মসূচি নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ