logo
Monday , 23 October 2023
  1. সকল নিউজ

কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু ২৯ অক্টোবর

প্রতিবেদক
admin
October 23, 2023 4:17 pm

আর মাত্র চারদিন পর শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্ত হচ্ছে নতুন আরেক সফলতা। একদিকে সমুদ্রের দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জোয়ার ভাটার কর্ণফুলী নদী। কখনো উত্তাল ঢেউ, কখনো শান্ত এ নদীর গভীর তলদেশ চিরে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। দেশজুড়ে নতুন মাত্রার সড়ক, রেল, নদী এবং আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার পর প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে টানেল পথ। আকাশ পথে যাত্রা যেমন সব সময় ভিন্ন এক অনুভূতির মাত্রায় থাকে, তেমনি নদীর তলদেশ দিয়ে পাড়ি জমানো থাকবে রোমাঞ্চকর। আগামী ২৮ অক্টোবর বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হবে বঙ্গবন্ধু টানেলের। পরদিন থেকে উন্মুক্ত হবে যানবাহন চলাচলের জন্য।

টানা প্রায় চারবছর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ফুঁড়ে চ্যালেঞ্জিং কর্মযজ্ঞ শেষে বঙ্গবন্ধু টানেল এখন নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সেতু বিভাগ (বিবিএ)। উদ্বোধনের আগে টানেল পরিচালনাকারী সংস্থা সিসিএল (চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি.) প্রি কমিশনিং, কমিশনিং এবং সবশেষে কয়েকদফায় ট্রায়াল রান সম্পন্ন করেছে। আগামী ২৮ অক্টোবর সকালে টানেলের পতেঙ্গাপ্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা দেবেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের সাজসাজ প্রস্তুতি এখন বিরাজমান। টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্ত থেকে সাজানো হচ্ছে বর্ণাঢ্য সাজে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো এরইমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। টানেলের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে মোতায়েন করা হয়েছে নৌবাহিনী সদস্যদের। গঠন করা হয়েছে বিএনএসএসইউ (বাংলাদেশ নেভি সিকিউরিটিজ সাপোর্ট ইউনিট)।

দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বঙ্গবন্ধু টানেল। এ টানেল চট্টগ্রাম শহর এবং দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। টানেল নির্মাণের ফলে ইতোমধ্যে আনোয়ারায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই আনোয়ারা একটি শিল্প কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধু টানেল এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে নিঃসন্দেহে। অপরদিকে, দেশের প্রধান বাণিজ্যনগরে চট্টগ্রাম পরিণত হবে ওয়ান সিটি টু টাউন বা একনগর দুই শহরে।

চীন সরকারের স্বল্পসুদে আর্থিক সহায়তায় এ টানেল নির্মিত হয়েছে। টানেল নির্মাণে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর জি টু জি পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক চুক্তির পর অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর পানির ওপরের অবস্থান থেকে ৪২ দশমিক ৮০ মিটার গভীরে এবং আনোয়ারা ও পতেঙ্গাপ্রান্তে ১৮ থেকে ৩০ মিটার গভীরে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুই টিউবে চারলেন সংবলিত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হয়েছে। একপাশ দিয়ে যাওয়া ও আরেক পাশ দিয়ে আসার ক্ষেত্রে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এ গতিতে টানেলের এপাড় থেকে ওপার যেতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে ৩ মিনিট।

টানেলের দক্ষিণপ্রান্ত আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১৪টি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির টোল প্লাজা। আর টানেল অভ্যন্তরে রয়েছে সিকিউরিটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা। রয়েছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ। এ ছাড়া রয়েছে অতি বৃষ্টি, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে টানেল রক্ষায় উভয়প্রান্তে দুটি ফ্লাডগেট। দিবারাত্র টানেলকে আলোকিত করে রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উভয়পাশে দুটি বিদ্যুতিক সাবস্টেশন। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর প্রথম বছরে ৭০ লাখ যানবাহন চলাচল করবে বলে সমীক্ষা করা হয়েছে। পরবর্তী বছরগুলোতে এ সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে, টানেলের দক্ষিণপ্রান্ত আনোয়ারা জুড়ে শুরু হয়েছে ভিন্নমাত্রার আবহ। কেননা, এ আনোয়ারা উপজেলা আগামীতে একটি উপশহরে পরিণত হচ্ছে। যোগাযোগের জন্য হচ্ছে নতুন হাব। গড়ে উঠবে নতুন নতুন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে শিল্প কারখানা। ইতোমধ্যে সেখানে বিরাট এলাকাজুড়ে তৈরি হচ্ছে চায়না ইকোনমিক জোন। এছাড়া আগে থেকেই রয়েছে দেশী-বিদেশী শিল্প কারখানা। কোরিয়ান ইপিজেডের অবস্থানও সেখানে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে আনোয়ারা উপজেলা অবহেলায় থাকার পর বঙ্গবন্ধু টানেল আনোয়ারাবাসীর জন্য নতুন আলো বয়ে এনেছে। ২৮ অক্টোবর পতেঙ্গাপ্রান্তে টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কার্যক্রম শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ারায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ