logo
Thursday , 12 October 2023
  1. সকল নিউজ

আর মাত্র ১ মাস পর ট্রেনের হুইসেল বাজবে কক্সবাজারে

প্রতিবেদক
admin
October 12, 2023 9:59 pm

আর এক মাস পরই ট্রেনের হুইসেল শুনবেন কক্সবাজারবাসী। নতুন লাইনে দ্রুতগতিতে ছুটবে ট্রেন। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ১৩৩ বছর আগের কক্সবাজারে ট্রেন ভ্রমণের যে স্বপ্ন দেখিয়েও ব্রিটিশরা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তা বর্তমান সরকার বাস্তবে রূপ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোর প্রচেষ্টার আরেকটি মাইলফলক এ প্রকল্পটির কারণে সারাদেশের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সড়ক, আকাশপথ এবং সর্বশেষ রেলপথ যুক্ত হওয়ায় কক্সবাজারে বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সূচনা হবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

শতভাগ রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এখন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনানুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক ট্রায়াল রান চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ মাসেই হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল রান। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ট্রায়াল রানের বহরেই যাবেন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার।
বর্তমানে রেললাইন বসানোর কাজ শতভাগ শেষ। এখন চলছে স্টেশনসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ফিনিশিং কাজ। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এ প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য পর্যটন শহর কক্সবাজার, যেখানে বছরে ৬০ লাখের অধিক পর্যটকের যাতায়াত রয়েছে। প্রতিবছর এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। সরকার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। সড়কপথও সংস্কার হচ্ছে। আর সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছে রেললাইন। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যটননগরী কক্সবাজারের অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনার পাশাপাশি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সূচনা করবে।
সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত এই প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত রেলওয়ের কর্মকর্তারা প্রতিদিনই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ধাপে ধাপে পরিদর্শন করছেন। একইভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তারাও রেলপথের অনানুষ্ঠানিক ট্রায়াল দিচ্ছেন। উদ্বোধনের দিন ঘনিয়ে আসায় চলছে দ্রুতগতিতে শেষ সময়ের কাজ।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু। ১৪৯টি বক্স কালভার্ট ও ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট। প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)। আর বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে।
সার্বিক প্রসঙ্গে ঠিকাদানি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিমল সাহা বলেন, এ মাসের যে কোনো দিন ট্রায়াল রান হবে। তবে ১৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল হচ্ছে না। আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা বর্তমানে অনানুষ্ঠানিক ট্রায়াল দিচ্ছেন। যেহেতু এটি রেলপথ, তাই আমাদের ট্রায়ালের আগেই দেখতে হবে কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না, কিংবা কোন পথে কী সমস্যা। তবে শত ভাগ রেলরুট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে নিশ্চিত করে এ কর্মকর্তা জানান, ওয়েল্ডিং এবং লিংকিং ফিনিশড। এ মাসের যে কোনো একটি নির্ধারিত তারিখে আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল রান হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলমান রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে, যার ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা আগামী বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা চলতি বছরের অক্টোবরেই সম্পন্ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে একের অধিক ট্রেন যুক্ত করা হবে। সরকারের এই মাইলফলক প্রকল্পটি কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা আরও পাল্টে দেবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যয় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহন হিসেবে রেলকে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেন, যা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে অগ্রাধিকারভুক্ত।
প্রকল্পের আওতায় ঝিনুকের আদলে তৈরি স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে স্টশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারেন সেজন্য এ ব্যবস্থাটা করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনটি দেখতে এখনই অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন। দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি ইতালি, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনে এখন চলছে শেষ সময়ের ফিটিংসের কাজ।

প্রসঙ্গত ১৩৩ বছর আগে কক্সবাজারে ট্রেন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা ভেস্তে যায়। এর পর বিভিন্ন জটিলতায় এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয়, যা বর্তমানে দৃশ্যমান। স্বপ্ন পূরণের অগ্রযাত্রায় মাইলফলক এ প্রকল্পে দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার পর্যন্ত নয়টি স্টেশন এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।

সর্বশেষ - সকল নিউজ