logo
Thursday , 20 April 2023
  1. সকল নিউজ

অগ্নিসন্ত্রাসীরা দেশ ও মানুষের মঙ্গল চায় না

প্রতিবেদক
admin
April 20, 2023 10:06 am

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুন সন্ত্রাসীরা এই দেশ ও মানুষের মঙ্গল চায় না। এরা কারও ভালো দেখতে পারে না। এটাই হলো বাস্তবতা।

তিনি বলেন, ’৭৫ সালের পর এবং ১৯৭৭ সালে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয় মানুষ সে ঘটনাগুলো ভুলে যাচ্ছে। অথচ সে সময় জিয়াউর রহমান নাকি হাসতে হাসতে ফাঁসির রায় লিখত।

বিচার নাই, ফাঁসি হয়ে গেছে পরে রায় বের হয়েছে। কী জুলুম? কী অত্যাচার? কী অন্যায়? এসব মানুষ এখন ধীরে ধীরে জানতে পারছে। তিনি বলেন, জিয়া শুরু করেছিল, তার বউ করল এবং তার ছেলেরা মিলে পরে এই অগ্নি-সন্ত্রাস করল। মঙ্গলবার গণভবনে ঈদ-পূর্ববর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে শুরুতে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময়ে কিভাবে বিনাবিচারে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এ সময় ভুক্তভোগী কয়েকজনের পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব ঘটনার বিচার চান। এছাড়া আন্দোলনের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসের ওপর নির্মিত আরেকটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

সেই সময়ের কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য রেখে এ ঘটনার বিচার চান। অনুষ্ঠান শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ীও ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশের জন্য আমার আব্বা সারা জীবন কষ্ট করে গেছেন। আমার একটাই চেষ্টা দেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে মানুষ যখন ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে একটু সচ্ছল হওয়ার পথে, ঠিক সে সময় আবারও অগ্নি-সন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে।

এটা যারা করে এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আমার মনে হয় আল্লাহ সহ্য করবেন না। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, দিনের পর দিন ফাঁসির ঘটনা, বিদেশ থেকেই খবরগুলো শুনতাম। পাকিস্তানি বাহিনী যেমন বর্বরতা চালিয়েছিল এই বিএনপি-জামায়াতও একই বর্বরতা চালায়।

ভুক্তভোগীদের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে শুরু হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম এমন একটা দিন নেই যে লাশ টানতে হয়নি।

আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এর পরও কি করে এদের পাশে লোক থাকে? আমি বুঝে উঠতে পারি না। ২০১৩ সাল পরবর্তী অগ্নি-সন্ত্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, একটা জীবন্ত মানুষকে কিভাবে পোড়ানো যায়? যাদের কোনো অপরাধ নেই। বুঝলাম যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে, তাদের মেরেছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তাদের ওপর এই জলুম অত্যাচার কেন?

সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করেই যেন মার্কেটে আগুন লাগাটা বেড়ে গেল। আমার মনে সন্দেহ লাগল এটাও নাশকতা নাকি? যারা গাড়িতে, বাসে, রিকশায় আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পোড়াতে পারে এরা মানুষের ক্ষতি করাটাই জানে। ঈদের সময় মানুষ একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, সেই পথটাও যেন তারা বন্ধ করে দিতে চায়। আমার তো মনে হয় এখানেও কিছু একটা ঘটনা আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হয়েছেন শুধু এটুকু বলতে পারি তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমি আপনাদের মতো, হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নেই।

বিদেশে বোনকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় ছয় বছর রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। কাজেই আমরা এই কষ্টটা বুঝি। বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, শুধু এটুকু বলব যারা এই অন্যায় করেছে তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে।

সেটা আমরা করব। নিজেকে স্বজনহারা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো একজন স্বজনহারা। আমি চিন্তা করলাম যারা আমার মতো স্বজনহারা তাদের সঙ্গে একটু দেখা করব, কথা বলব, সেজন্যই আপনাদের ডাকা।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুর সোবহান গোলাপ।

কেন আমার এত বড় ক্ষতি করা হলো : ২০১৪ সালে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার রূপগঞ্জের সালাউদ্দিন অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, কথা বলার সময় সুস্থ মানুষের একটি ছবি আপনারা দেখেছেন সেটা আমি। আর একই ফ্রেমের নিচে ঝলসে যাওয়া ছবিটাও আমার। দেখুন আমাকে কী করে দেওয়া হলো। আমি একটা সাধারণ মানুষ। কেন আমার এত বড় ক্ষতি করা হলো।

সন্তান জিজ্ঞেস করে হাত কোথায় : ওই সময় অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দুই হাত কবজি পর্যন্ত হারান পুলিশের এসআই মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনি প্রয়োজন মনে করে আজ আমাদের ডেকে এনেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার সন্তান আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার হাত কোথায় গেল, আমার হাতের অবস্থা এমন কেন, আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। আমি আমার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে পারি না। এটা যে কত কষ্টের তা বলে বোঝানোর মতো নয়। আমি এর বিচার চাই।

চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী : বিমানবাহিনীতে কর্মরত সার্জেন্ট মোশারফকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে জিয়াউর রহমান-এমনটা উল্লেখ করে তার কন্যা বলেন, আমার বুকে অনেক কষ্ট। আমি কথা গুছিয়ে বলতে পারি। কী বলে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব সে ভাষা আমার নেই। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। সার্জেন্ট মোশারফের মেয়ে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এতদিনেও জানতে পারিনি স্বামীর কবর কোথায় : প্রধানমন্ত্রীর সামনে অনুভূতি প্রকাশ করেন ৭৭ সালে স্বামীহারা সার্জেন্ট দেলোয়ারের স্ত্রী নূর নাহার বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে কোনো কারণ ছাড়াই জিয়াউর রহমান হত্যা করে। তার পরিবারকে না জানিয়ে ফাঁসি দেয় এবং কবর কোথায় দেয় সেটাও বলেনি। এতদিনেও জানতে পারিনি আমার স্বামীর কবর কোথায়। এখন অনেকে লেখালেখি করছেন তারা জানাচ্ছেন তার কবর আজিমপুর গোরস্থানে।

সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আসুন আমরা এমডিবির মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে একটি সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করি।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়ন সহয়োগিতা : দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক ইসিওএসওসি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) প্যানেল আলোচনায় আগে ধারণকৃত তার ভিডিও বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০৩০ এজেন্ডা সফলভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসিওএসওসির ভূমিকার কথা স্বীকার করি।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে প্রথমত কোভিড-১৯ মহামারি এবং দ্বিতীয়ত রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিস্ময়কর প্রভাব পড়েছে। এই জটিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দুর্বল অংশের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে এবং বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এমডিবি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিবির অর্থায়ন বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বহুপাক্ষিক সংলাপকে যেমন করে উৎসাহিত করবে, তেমনইভাবে এসডিজি অর্জনের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকারী আধুনিক নীতিমালাকেও এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন, এটি ২০১৫ সালের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত ম্যান্ডেটের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

সর্বশেষ - সকল নিউজ