পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আট বাংলাদেশির মৃত্যু এবং আরো ১৮ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেছেন, বাসটিতে ৪৭ জন ওমরাহযাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জনই বাংলাদেশি।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. আরিফুজ্জামানসহ দুজন কর্মকর্তা। প্রথম সচিব আরিফুজ্জামান বলেছেন, দুর্ঘটনায় মোট ২২ যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও ২২ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৮ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন হাসপাতালে পেয়েছি। আহতদের দেখাশোনার জন্য টিম সেখানে রয়েছে।’
আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু : কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রুবা আল হিজাজ ট্রান্সপোর্ট কম্পানির একটি বাস বিভিন্ন দেশের ওমরাহযাত্রীদের নিয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে যাওয়ার সময় ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল আসির প্রদেশের আকাবাত শার নামে আকাবাঁকা সড়কটি পর্বত কেটে বানানো। ওই সড়কে অনেক টানেল ও সেতু আছে। প্রাথমিক খবরে পাওয়া গেছে, ব্রেক সিস্টেমে ত্রুটির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এরপর সেই গাড়িকে নিয়ে বাস সামনের দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। ওই পরিস্থিতিতে বাসযাত্রীরা বাস থেকে বের হতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়।
মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন : কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জেদ্দা থেকে প্রায় সাড়ে ছয় শ কিলোমিটার দূরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ও আইনি সহকারীর সমন্বয়ে একটি টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, আগুনে পুড়ে ও শরীর ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় নিহতদের নাগরিকত্ব শনাক্ত করা কঠিন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পরিবারগুলোকে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে। মরদেহগুলো দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
দুর্ঘটনা সম্পর্কে যা বলছে সৌদি গণমাধ্যম : সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল আখবারিয়া জানিয়েছে, মক্কায় ওমরাহযাত্রীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত বাস একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা খেলে তাতে আগুন ধরে যায়। বাসটি খামিস মুশাইত শহর থেকে রওনা হয়েছিল।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাসটির ব্রেকে সমস্যা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসটি সেতুর শেষ প্রান্তে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়।
বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, আকাবাত শার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। এটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। পর্বত কেটে বানানো ওই সড়কে ১১টি টানেল ও ৩২টি সেতু রয়েছে।