অনিয়ম-দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল কমে হয়েছে ৬ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কাছে আছে মাত্র ৬৪৬ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মাধ্যমে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বৃদ্ধি করা হবে। সরকারি ঋণও আগের চেয়ে বাড়বে।
এ দিয়েই চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারের সঙ্গে সংগতি রেখে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৬ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণায় এ নীতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলনকক্ষে গতকাল রোববার মুদ্রানীতির নানা দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ও সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নিজেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পর গভর্নরের এটাই ছিল প্রথম মুদ্রানীতির ঘোষণা।
“আমানতের প্রবৃদ্ধি কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে টাকার সংকট মেটাবে। এতে ডলার–সংকট আরও বাড়বে।”
আহসান এইচ মনসুর, অর্থনীতিবিদ
তবে এ মুদ্রানীতি দিয়ে অর্থনীতির সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, ডলার ও টাকার সংকট। এসবই এখন অর্থনীতির প্রধান তিন সমস্যা। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে টাকার সংকট মেটাবে। এতে ডলার–সংকট আরও বাড়বে। আগে বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি করা হতো। নানা ভুল নীতির কারণে এখন বিদেশি মুদ্রা দেশে আসা কমে গেছে। এখন টাকা ছাপিয়ে সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, যা পুরো অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। উচিত ছিল ঋণের সুদহারের সীমা পুরোপুরি তুলে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা।’