আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা রাজনীতিকরা রাজনীতিকে ভালো মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করতে পারিনি। যে কারণে আজ ভালো মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, সৎ মানুষ, যোগ্য মানুষ রাজনীতিতে আসতে চান না। ছাত্ররাজনীতির অতীতের সুনামের ধারা ‘কোথায় যেন’ হারিয়ে গেছে। ভালো লোকদের রাজনীতিতে আনতে হবে, মেধাবীদের রাজনীতিতে আনতে হবে, সৎ লোকদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। না হলে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে যাবে। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে, না হলে রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে যাবে। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
রোববার রাজধানীর ইঞ্জিসিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মঞ্চে থাকা সত্তর দশকের ছাত্রনেতাদের সামনে তিনি এ কথা বলেন। জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।
বাংলাদেশে রাজনীতিতে ‘ভালো মানুষের জন্য’ আকর্ষণীয় করে তুলতে না পারার ব্যর্থতা-দায় রাজনীতিবিদদের ওপর দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, এই ব্যর্থতার দায় আমাদের। এটা স্বীকার করতেই হবে। দেশে শেখ হাসিনা একদিনে একশ সেতু উদ্বোধন করেছেন, কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনো সেতু নির্মাণ করতে পারিনি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ উলটো পথে যাত্রা শুরু করল। বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতি বিপ্লব শুরু হলো। গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কে দেওয়াল উঠতে শুরু করল। জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড, একুশে আগস্টের হত্যাকাণ্ডে সেই দেওয়াল আরও উঁচুতে উঠতে থাকল। কিন্তু কোনো ব্রিজ তৈরি হয়নি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। আর বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সেখানেই। কারণ দলগুলো বারবার ‘নষ্ট রাজনীতির কাছে’ আত্মসমর্পণ করেছে। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়, নষ্ট রাজনীতিকরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই। এত ডিভাইডেড, এত পোলারাইজড আমাদের রাজনীতি। এর জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করিনি।
আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি বিভিন্ন অপতৎপরতার মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে বিলুপ্ত করে বিএনপি আবার দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। সংবিধান সংশোধনের নামে আবার তারা এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। তিনি বলেন, আজ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বড় প্রয়োজন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানকে আবারও বিএনপি ক্ষতবিক্ষত করতে চায়। অরাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করে, সংবিধানকে আবারও তারা ক্ষতবিক্ষত করতে চায়।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি অপরাজনীতি করা দল। তারা রাজনৈতিক বেয়াদব। তারা রাষ্ট্রকে কী মেরামত করবে? আগে তাদেরকে মেরামত করতে হবে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করাকে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মন্তব্য করে বলেন, আমার বড় বোন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় বোনের সেই অভাব পূরণ করেছেন। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকতে হবে।
দীলিপ বড়ুয়া বলেন, বিএনপি অরাজনৈতিক ধারাকে অনুসরণ করে। যারা অরাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করে, এদেশে তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত নয়।
সভাপতির বক্তব্যে অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র রুখতে শরিকদের প্রতি আহ্বান জানান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি বলেন, আমরা যাদের প্রতিহত করতে চাচ্ছি, তাদের সন্তানরা সব দলের বড় বড় অনেক জায়গায় বসে আছেন। আর আমরা এখানে বসে তাদের প্রতিরোধ করার কথা বলছি। একদিকে আদর্শের কথা বলব, চেতনার কথা বলব, স্বাধীনতা যে কারণে অর্জন করেছিলাম সেই কথা বলব, সবই সত্য। কিন্তু আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, অন্যদের প্রতিরোধ করতে চাচ্ছি, কিন্তু ঘরের ভেতরে যারা আছেন, তাদেরও প্রতিরোধ করতে হবে।