logo
Tuesday , 22 November 2022
  1. সকল নিউজ

বিদ্যুতের দাম বাড়ল পাইকারি পর্যায়ে

প্রতিবেদক
admin
November 22, 2022 9:30 am

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। প্রতি ইউনিটে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩ পয়সা। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান।

বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়ানো হলেও পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহারটি অপরিবর্তিত থাকবে।

এদিকে পাইকারিতে নতুন দাম বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কম্পানিগুলো বিইআরসির কাছে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে শুরু করেছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে বিইআরসির পাইকারিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

সরকার বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি না দিলে কত শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো—এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল জলিল বলেন, সরকার ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কারণে নতুন দরে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। যদি ভর্তুকি না দিত, তাহলে ইউনিটপ্রতি দাম পড়ত ৮ টাকা ২৮ পয়সা।

মূল্যস্ফীতির চাপ এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় বিইআরসি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল গত মাসে। ১৩ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিপিডিবি বিইআরসির কাছে আপিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দাম ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। এ ব্যাপারে ১৮ মে কমিশনের গণশুনানি হয়। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ভর্তুকি বাদে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণ পেতে সরকারকে কিছু শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে আইএমএফ ভর্তুকি সংস্কারের জন্য বলেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়। এর অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে গত ১২ বছরে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ (নতুন মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াই) এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় সরকারি ভর্তুকি তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরে পাইকারি পর্যায়ে ৮.৩৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫.৩ শতাংশ।

বিদ্যুৎ বিভাগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম ৪২.৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং গত জুন মাসে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে পরিবহন, কৃষি, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনেও। এ পরিস্থিতিতে যদি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে দেশে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়বে। তাই এই মুহূর্তে আরেক দফা ভোগান্তিতে ফেলতে চায় না সরকার, যার কারণে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লেও গ্রাহক পর্যায়ে এখনই বাড়বে না।

গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব : পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিইআরসিতে। গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় এই বিতরণ প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণ করে।

গতকাল কালের কণ্ঠকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওজোপাডিকোর এমডি মো. আজহারুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সরাসরি বিইআরসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। পাইকারিতে যে হারে দাম বেড়েছে, সেই হারেই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘যখন পাইকারিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানি হয়েছিল, তখনই গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির একটি প্রস্তাব আমরা প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। এখন সেটি নতুন করে গুছিয়ে জমা দিয়েছি। ’

খুব শিগগির বাকি কম্পানিগুলো বিইআরসিতে তাদের প্রস্তাব জমা দেবে বলে জানা গেছে।

দেশে বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিপিডিবি। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করছে দেশের পাঁচটি কম্পানি। এগুলো হলো ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। বিপিডিবিও পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির পাশাপাশি দেশের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত