দুর্নীতির মামলায় করাবন্দি পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমানকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার চাকরিচ্যুতির আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেপরোয়া দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৬ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিচারে হাইকোর্ট বিভাগ তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪২(১) ধারা অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বরখাস্তের এ আদেশ কার্যকর হবে।
কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে কয়েক বছর আগে গণমাধ্যমে উঠে আসে তার নাম। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পর্দার আড়ালে সক্রিয় ছিলেন প্রভাবশালীরা। তবে তার শেষ রক্ষা হলো না।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে মিজানুর রহমানের দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মিজান। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
দুদক জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুন মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এতে মিজান ছাড়াও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাগিনা মাহমুদুল হাসান (পুলিশের এসআই) ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর মিজানকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মিজানের অপকর্মের দায় বাহিনী নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। তবে এরপরও পর্দার আড়ালে সক্রিয় ছিলেন কুশীলবরা। মিজানকে বাঁচাতে প্রায় সব চেষ্টাই তারা করে গেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হননি।
এদিকে ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলাকালে ঘটে আরেক নাটকীয় ঘটনা। দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দেওয়ার কথা ফাঁস করে দেন মিজান। এতে দুদকের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ফলে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধেও মাঠে নামে দুদক। ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একপর্যায়ে গ্রেফতার হন এনামুল বাছির।