logo
Wednesday , 2 November 2022
  1. সকল নিউজ

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট কম খরচে মানসম্মত সেবায় সন্তুষ্ট রোগীর স্বজনরা

প্রতিবেদক
admin
November 2, 2022 8:34 am

পুরান ঢাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা নেওয়ার অন্যতম ভরসাস্থল ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজসহ আশপাশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি বেশ জনপ্রিয়। প্রাথমিকসহ মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এটি সব সময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমানে এই হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এ বছর হাসপাতালটি থেকে ৭৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী সেবা দিয়ে সুস্থ হয়েছেন। গত বছর এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ১ হাজার ১৩০ জন ডেঙ্গু রোগী। এখনও ৯০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে হাসপাতালটিতে।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে আসা মো. শামীম (২৭) নামের একজন বলেন, ‘আমি কেরানীগঞ্জ উপজেলা থেকে আমার ছেলেকে (২) নিয়ে এখানে এসেছি। ডাক্তার বলেছে আমার মেয়েকে ডেঙ্গু মশা কামড়ায়নি। ডেঙ্গু আছে, এমন একজনের রক্ত খেয়ে আমার মেয়ের রক্ত খেয়েছে। ফলে আমার মেয়ের ডেঙ্গু হয়েছে। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এখন সে সুস্থ আছে। এর আগে আমি আমার ভাগনিকে নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সে-ও সুস্থ হয়েছে। তবে এখানকার পরিবেশ ও সেবার মান সেখানকার চেয়ে অনেক ভালো।’

রোগী নিয়ে আসা মো. অলি মিয়াও (৩৫) নামের আরেকজন এখানকার পরিবেশ ও সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে (৭) নিয়ে চার দিন আগে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। তখন তার খুবই বাজে অবস্থা ছিল। এখন তার অবস্থা মোটামুটি ভালো। এই হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। আসলে একজন রোগীর সুস্থ হওয়ার পেছনে সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ অবদান রাখে। সরকারি হাসপাতাল আর এখানকার অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে আনুসঙ্গিক খরচ বিবেচনা করলে এ হাসপাতালে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের সেবা নেওয়ার মতো সেই সামর্থ্য আছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ মেসের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে তাড়াহুড়ো করে প্রথমেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে আসি। তারপর অবস্থার ওপর নির্ভর করে এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এটা যদি পুরোপুরি সরকারি হতো, তাহলে খুব ভালো হতো। অথবা শিক্ষার্থীদের জন্য যদি কোনও স্পেশাল ছাড়ের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে আরও সুবিধা হতো।

তবে এখানকার স্টাফদের ব্যবহার ও হাসপাতালের পরিবেশ সব মিলিয়ে রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা মানুষকে সন্তুষ্ট করবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই হাসপাতালে সীমিত সিটের কারণে মাঝেমধ্যে রোগীর চাপ বেড়ে গেলে তখন ফ্লোরে একটু সমস্যা হয়।’

তবে এখানকার একটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয়স্বজনরা। তারা বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে বের হতে দেরি, হুমড়ি খেয়ে কিছু মানুষ গায়ে পড়তে দেরি হয় না। এই হাসপাতালের সামনে অহরহ ওষুধ কোম্পানির লোকজন রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করে। তারা দেখে যে তাদের কোম্পানির ওষুধ ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন কি না। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নতুবা সঠিক চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোগীর অভিভাবক।’

হাসপাতালের সেবা ও মানের বিষয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইফ্ফাত আরা বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীসহ সব রোগীকে সর্বোচ্চটুকু চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাদের এখানে সব ধরনের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে আইসিইউর সুব্যবস্থাও আছে। ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য এই হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এখানে সময়মতো মশক নিধন ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতিদিন দুবার করে পুরো হাসপাতাল ও হাসপাতালের আঙিনা ভালো ভাবে পরিষ্কার করা হয়।’

হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতাল যেহেতু পুরোপুরি সরকারি না, সেহেতু এখানকার সেবা উন্মুক্ত বা ফ্রি নয়। তবে একেবারে সাশ্রয় খরচে এখানকার চিকিৎসা নেওয়া যায়। ক্যাবিন ভাড়া ও তিন বেলা খাবারসহ মাত্র ৬৫০ টাকায় দৈনিক এখানে সেবা পাওয়া যায়। একেবারে গরিব ও দুস্থ রোগীদের জন্য সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা করা হয়।’

এখানকার নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের প্রতি রোগীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘কোনও রোগী যদি কোনও কারণে সেবায় অসন্তুষ্ট হন, তাহলে তার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।’

প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ কোম্পানির লোকজনের টানাটানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যেনো কোনও রোগীর আত্মীয়কে হেনস্তা করতে না পারে, সে জন্য আমরা তাদের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ