logo
Sunday , 16 October 2022
  1. সকল নিউজ

খাদ্যনিরাপত্তায় বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তন

প্রতিবেদক
admin
October 16, 2022 8:19 am

স্বাধানীতার পরবর্তী বছর থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শস্য উৎপাদন বেড়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইতিমধ্যে কিছু কিছু ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনের ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আরো নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও ফলন পার্থক্য কমানোর কথা বলছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ইস্যু খাদ্যনিরাপত্তা। নতুন জাত উদ্ভাবন করে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বিশ্ব জুড়ে শুধু খাদ্যের অভাবেই প্রতি চার সেকেন্ডে এক জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বলে সম্প্রতি জাতিসংঘের কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে ৭৫টি দেশের ২৩৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন ১৯ হাজার ৭০০ জন মানুষ ক্ষুধায় মারা যায়। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪ দশমিক ৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। বিশ্বের যখন এই পরিস্থিতি, তখন খাদ্যনিরাপত্তার দিকে জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর খাদ্যনিরাপত্তার সবচেয়ে বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায় সে পরিকল্পনা করতে হবে।

নেচার ফুড জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের ২০৩০ সালের প্রথম দিকে ভুট্টা (ভুট্টা) এবং গমের উত্পাদনকে প্রভাবিত করতে পারে। ভুট্টার ফসলের ফলন ২৪ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীজের গজানো, পরাগায়ন, ফুল ও ফল ধরা, পরিপক্বতা হতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো দরকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময় খরা থাকছে। অথবা অসময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, হচ্ছে বন্যা। শীতকাল কম হচ্ছে বা বেশি হচ্ছে। এভাবে ফসল ফলানোর জন্য উপাদানগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু বীজ বপন ও চারা রোপণের সময় পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। ফলে শস্য উৎপাদনে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর কারণে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। আর এ কারণে গম, ছোলা, মসুর, মুগ ডালসহ কিছু কিছু ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।গবেষকরা বলছেন, গমের বীজ গজানোর তাপমাত্রা প্রয়োজন ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কম-বেশি হলে বীজ গজাবে না। গম পাকার সময়ে আর্দ্রতা বেশি ও ঘন কুয়াশা থাকলে ব্লাক পয়েন্ট রোগ হবে। পাশাপাশি ফলনও কম হবে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ১ মিটার বাড়তে পারে। এর প্রভাবে হাজার হাজার হেক্টর উর্বর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে। আর এতে ব্যাপকভাবে কমে যাবে ধান, গম, আখ, পাট, মটরসহ রবিশস্য উৎপাদন।

কৃষি গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ হচ্ছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তার ওপর।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ইত্তেফাককে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বড় ঝুঁকি বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব। তাই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এছাড়া মাঠে যেসব জাত রয়েছে তার ফলন ২০ শতাংশ কম। তাই ফলন পার্থক্য কমাতে হবে। এতে খাদ্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়বে। যা খাদ্য নিরাপত্তা ভালো কাজ করবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক জাহাঙ্গীর আলম খান ইত্তেফাককে বলেন, গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ খরা ছিল। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়েছে। দীর্ঘ খরা কৃষির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই গবেষক আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক রাজনীতিও নির্ভর করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণের প্রভাবও বাড়ছে। যে জাতগুলো রয়েছে সেগুলোও অতিরিক্ত লবণ মাটিতে কাজ করছে না। এ কারণে আরো লবণাক্ততা সহনশীল জাতের উদ্ভাবন করতে হবে। চাষ পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন শস্য পর্যায় উদ্ভাবন করতে হবে। পানি কম লাগে এমন ফসলের চাষ করতে হবে। অল্প চাষ বা বিনা চাষে উৎপাদন পদ্ধতিকে উত্সাহিত করে উপযোগী ফসলের চাষ করতে হবে, বন্যা মোকাবিলা সক্ষম ধানের পাশাপাশি সবজি ও অন্যান্য ফসলের চাষ করা সম্ভব। তাপমাত্রা সহনশীল ফসলের জাতের চাষ করতে হবে, বালাই সহনশীল ফসলের চাষ এবং ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ :আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য—কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও কৃষি মন্ত্রণালয় দিবসটি উদযাপনের জন্য বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে এবার দেশে ১৭ অক্টোবর তারিখে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত