এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এডিবিকে আরো উন্নয়ন সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। এ সময় অর্থমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পে এ অর্থবছরে প্রায় দুইশ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা প্রক্রিয়াধীন রেখেছে এডিবি।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী এডিবি এ পর্যন্ত ২৭.৫৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এডিবিকে আরো উন্নয়ন সহযোগিতার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও এডিবির মধ্যে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আগামী ২৬-৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এডিবি বোর্ডের ৫৫তম বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণে সম্মতি দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে অগ্রিম ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও এডিবির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের বিষয়েও আলোচনা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পে এ অর্থবছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা প্রক্রিয়াধীন আছে।
এডিমন গিন্টিং বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এডিবির দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং এডিবি বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এ দেশের গ্রামীণ ও নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এডিবি। তিনি কভিড-১৯ মহামারির ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অন্যতম সেরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সব সময় এডিবি থাকবে বলে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ
চলমান প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এর পাশাপাশি নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘বাংলাদেশ গ্রিন, রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রগ্রাম থেকে আরো ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়টি।
গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বাজেট সহায়তাসংক্রান্ত আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে। এ সময় একসঙ্গে অনেক বাজেট সহায়তার পরিবর্তে এখন যে দুটি বাজেট সহায়তার আলোচনা চলছে, সেগুলোর আকার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা।
বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বাংলাদেশকে চলতি অর্থবছরের ‘বাংলাদেশ সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স’ ক্রেডিট স্কিম থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ গ্রিন, রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রগ্রাম থেকে আরো ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বিশ্বব্যাংক থেকে আইডিএ ঋণ বিনা সুদে পাবে বাংলাদেশ
বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে বিনা সুদে ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বহুজাতিক ঋণদাতা এই সংস্থা বাংলাদেশের জন্য আপাতত প্রায় ৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আইডিএ বাংলাদেশসহ গরিব ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের জন্য নতুন একটি শাখা খুলেছে, যেখান থেকে বিনা সুদে স্বল্প সময়ের জন্য মিলবে ঋণ। ‘আইডিএ-২০’তে নতুন এই শাখা যুক্ত করা হয়েছে। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ এই শাখা থেকে ঋণ নিতে পারবে। জানা গেছে, শর্ট টার্ম ম্যাচিউরিটি লোন বা স্বল্পমেয়াদি এই ঋণ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছর রেয়াতকাল। এই ঋণে কোনো সুদ থাকবে না, সেবা মাসুলও থাকবে না। বলা যায়, প্রায় বিনা সুদেই এই ঋণ মিলবে। শুধু ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলেই হবে।