logo
Wednesday , 7 September 2022
  1. সকল নিউজ

লঘু অপরাধে শাস্তির বদলে সংশোধনের সুযোগ : আইনেই বিচারকের সেই ক্ষমতা রয়েছে

প্রতিবেদক
admin
September 7, 2022 8:39 am

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর বোয়াইলভীড় গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানবালা। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে ছিলেন দিশাহারা। বাড়িতে চার বোতল ফেনসিডিল পাওয়ার মামলায় হন দোষী সাব্যস্ত। বিচারক তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে লেখাপড়া শেখাসহ কিছু শর্তে সংশোধনের সুযোগ দেন। সেই শর্ত পালন করে জ্ঞানবালা এখন বই পড়তে পারেন, এমনকি আগে টিপসহি দিলেও এখন নিজের নাম স্বাক্ষর করতে পারছেন। কুড়িগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত হতে এরকম নানা লঘু অপরাধে গত আট মাসে ৮২ জন দণ্ডিত হলেও বিভিন্ন মাদক মামলায় জ্ঞানবালা, নয়ন মিয়া, ওয়াহেদ আলীসহ ১৯ জনকে বাড়িতেই নানা শর্তে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন এই বিচারক। এক কেজি গাঁজা উদ্ধারের মামলায় মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুর রহিম দোষী সাব্যস্ত হলেও সাজার পরিবর্তে তাদের এক বছর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং দুটি এতিমখানায় বাংলা অনুবাদসহ দুটি কোরআন শরিফ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম। এভাবেই দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকরা লঘু অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অনেক অভিযুক্তকে সাজা প্রদান না করে দিচ্ছেন সংশোধনের শর্ত। সুযোগ পাচ্ছেন প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে নিজ বাড়িতে অবস্থানের। তবে বিচারকের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করলে জেলে যাওয়ার নজির রয়েছে অনেক। ছয় দশকের পুরোনো আইন ‘দ্য প্রবেশন অফেনডারস অর্ডিন্যান্স’-এর বিধানাবলি প্রয়োগ করে অপরাধীদের এই সংশোধনের সুযোগ প্রদানের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনে বলা হয়েছে, কারাগারে না পাঠিয়ে অপরাধীর ওপর যে কোনো শর্ত আরোপের ক্ষমতা রয়েছে বিচারকের। আরোপিত শর্ত ভঙ্গ করলে মূল অপরাধের জন্য অপরাধীকে দণ্ড প্রদান করে কারাগারে পাঠাতে পারবেন বিচারক।

পুরোনো এই আইনের কার্যকর প্রয়োগে সন্তুষ্ট বাদী ও বিবাদী। গত চার বছর ধরে এই আইনের প্রয়োগ চলছে দেশের আদালতগুলোতে। তবে বিভিন্ন সময়ে এই শর্ত আরোপ নিয়েও অনেক সময় আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তদের ওপর সেসব শর্ত আরোপ করা উচিত যা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। শর্তগুলো অভিযুক্ত ব্যক্তির মেনে চলা এবং প্রবেশন কর্মকর্তা যেন সঠিকভাবে মনিটরিং করতে পারেন সেই সুযোগ রাখতে হবে।

১৯৬০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘দ্য প্রবেশন অব অফেনডারস অর্ডিন্যান্স’। কতিপয় মামলার অপরাধীদের প্রবেশনে মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে এ আইন। কিন্তু এই আইনটি প্রণয়ন করা হলেও গত ৫৮ বছর ধরে এটার কার্যকর প্রয়োগ ছিল না। চার বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইনটির কার্যকর প্রয়োগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীকে সর্বক্ষেত্রেই সাজা আরোপ করা আইন সমর্থন করে না। কেননা সাজা প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য সংশোধনমূলক, প্রতিহিংসামূলক নয়। সাজা প্রদানের এই আদর্শিক বিষয় বিবেচনায় রেখে অপরাধীদের বয়স, পূর্বাপর আচার-আচরণ, দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এই আইনের বিধানাবলির যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রচলিত আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করা বা প্রয়োগ না করা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং বিচারকের অসদাচরণের শামিল।

কঠোর এই নির্দেশনা জারির পর অধস্তন আদালতের বিচারকরা ‘প্রবেশন অব অফেনডারস অর্ডিন্যান্স’-এর বিধানাবলির প্রয়োগ করছেন। গত চার বছরে ফৌজদারি মামলায় লঘু অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শর্তসাপেক্ষে সংশোধনের সুযোগ পেয়েছেন সাড়ে ৬ হাজার ব্যক্তি। যাদের বয়স, চরিত্র পূর্ববর্তী অবস্থা বিবেচনা করে কারাগারে না পাঠিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার অধীনে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। এসব শর্তের অন্যতম ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই পড়া, গাছ রোপণ, শিক্ষার্থীদের গান শেখানো, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বাবা-মায়ের সেবা করা, বাল্যবিবাহ না দেওয়া ইত্যাদি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ল’ রিপোর্টস (ডিএলআর) সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ইত্তেফাককে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যায়ের বিচারকদের মধ্যে এই আইনের প্রয়োগের চর্চাটা আরো বাড়ানো দরকার। এই চর্চাটা বৃদ্ধি পেলে প্রথমবার যারা অপরাধ করে দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন তারা নিজেদের সংশোধন করার সুযোগ পাবেন।

প্রসঙ্গত ‘মতি মাতবর বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় হাইকোর্ট এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। সেখানে আসামির প্রবেশকালীন তার পরিবারের নির্ভরশীলদের প্রতি যত্নশীল হওয়া, পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখা, তার সঙ্গে বসবাসরত বৃদ্ধ মাতার প্রতি যত্নশীল হওয়া, তার স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার অগ্রগতি নিশ্চিত করা, আইনানুযায়ী বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে না দেওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো মাদকদ্রব্য ব্যবহার বা সেবন না করা এবং ছয় মাস পর ডোপ টেস্ট করার শর্ত দেওয়া হয়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ