logo
Tuesday , 6 September 2022
  1. সকল নিউজ

খাদ্য নিরাপত্তায় স্বস্তিদায়ক অবস্থানে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
admin
September 6, 2022 8:36 am

সরকার যেকোনও মূল্যে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে চায়। এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিত্যপণের দাম বাড়ছেই। আগামী নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের মজুত আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার যে কোনও ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চালের জোগান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারের গুদামে ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। তারপরও সরকার আরও ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব পণ্য দেশে আনা হবে। নতুন চালান দেশে এলে বাজার আরও স্থিতিশীল হবে। চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চায় সরকার। এর ফলে দাম নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সহসাই কেটে যাবে বলে আশা করছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চালের জোগান বাড়াতে বড় ধরনের ক্রয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকার পাঁচটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশগুলো হলো, রাশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ড। রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানিতে কূটনৈতিক সমস্যাও কেটে গেছে। দেশে এখন ২০ লাখ টনের বেশি চাল মজুত আছে; যা ‘সন্তোষজনক’ বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খাদ্যের দিক থেকে আমরা নিরাপদে আছি। তারপরও মজুত বাড়াতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে জিটুজি পর্যায়ে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে ৭০ হাজার টন লটের চাল আসবে পোর্টের মাধ্যমে। আর ৩০ হাজার টন স্থলবন্দরের মাধ্যমে আসবে। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি পর্যায়ে দুই লাখ টন থাই নন-বাসমতি চাল এবং ভারত থেকে ৩০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি মিলে একত্রে দুই লাখ ৩০ হাজার টন চাল আসবে। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভারতের সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট কনজুমার করপোরেশন সোসাইটি লিমিটেড। নন-বাসমতি প্রতিটন ৫২১ মার্কিন ডলার। ৩০ হাজার টন আতপ চাল প্রতিটন ৪৯৪ মার্কিন ডলার। সর্বমোট দুই লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানিতে খরচ হবে ১১ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। টাকায় এর পরিমাণ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ৬৯ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, সরকার রাশিয়া থেকে জিটুজি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এদিকে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত সরকারের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। চাল আমদানির জন্য যাদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে ফেল করতে পারে। এজন্য আগেই কিছু বিকল্প অর্ডার দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সভায় জানানো হয়েছে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। তবে এবছর নভেম্বরে সারাবিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচি চালানোর জন্য অতিরিক্ত আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আমদানি বন্ধের ১৬ দিন পর আবারও ভারত থেকে গম আমদানি শুরু হয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে মোট ৪৫ ট্রাকে ১ হাজার টন গম আসবে। এর অংশ হিসেবে ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬০০ টন গম বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে।

ভারতের ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশের অ্যাগ্রোভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান আড়াই হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া এ গমের কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ের কাজ করছে মেসার্স খলিফা এন্টারপ্রাইজ। গম রফতানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর গত ৩০ মে থেকে গমের কোনও চালান আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেনি। এতে নিষেধাজ্ঞার আগে আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা ১৪ হাজার টনেরও বেশি গম আটকা পড়ে। পরে ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে আগরতলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে গমের গাড়ি আগরতলা আসতে পারেনি। সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার ১১টি ট্রাকে ভারত থেকে ৩০০ টন গম আমদানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আরও ১৬ ট্রাকে ৩০০ টন গম এসেছে। দুদিনে ২৭ ট্রাকে ৬০০ টন গম এসে পৌঁছেছে। পর্যায়ক্রমে আটকে পড়া ১৪ হাজার টন গমই বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার ৩৬০ টনের। যার মধ্যে আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের। শুল্ক কমানোর পর এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে, প্রথম দফায় গত ৩০ জুন বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ৯৫টি প্রতিষ্ঠান, ৪ জুলাই ২ লাখ ৪৬ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ১২৫টি প্রতিষ্ঠান, ৭ জুলাই এক লাখ ৮২ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ৬২টি প্রতিষ্ঠান ও ১৩ জুলাই ৭৩ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) আরও ৯০ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের ১৭ আগস্ট থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সংকট কাটাতে ৪১৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমাদের খাদ্য আমদানি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, আন্তর্জাতিকভাবেও কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। গ্লোবালি ২৪টা ব্যাংক আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমদানি করতে পারি ডলার দিয়ে। খাদ্য প্রয়োজন হলে আনতে হবে, তবে এতে কোনও বাধা নেই।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত