একজন দাগী সন্ত্রাসী সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের মিথ্যা দাবির মধ্য দিয়ে সম্প্রতি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের শিরনামে আসার চেষ্টা করেছেন। ২০১৯ সালের ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার (৪৫ বিদেশী নাগরিকসহ ২৬৭ জন নিহত) সাথে জড়িত ইন্টারপোল-ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী-তহবিলকারী বরখাস্ত শহীদ উদ্দিন খান সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের মিথ্যা দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, এ সময় শহীদ উদ্দিন খান শ্রীলঙ্কার এই জিহাদি হামলাকারীদের কাছে ৯২ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করার জন্য অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করেছিলেন। এর পূর্বেই ২০১৯ সালে উইক্লি ব্লিটজ নামক পত্রিকা দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বেশ কয়েকটি জিহাদি সংগঠনের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যে গোপন ষড়যন্ত্রের প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তার মধ্যে শহীদ উদ্দিন খানের সংশ্লিষ্ট্তার কথা উল্লেখ করেছিল।
ইস্টার সানডে হামলার অন্তত দশ দিন আগে, একটি মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা আধিকারিকদের ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত দ্বারা গির্জাগুলিকে সম্ভাব্য হামলার হুমকির বিষয়ে একটি বিশদ সতর্কতা দিয়েছিল। একটি সনামধন্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাও একই ধরনের সতর্কবার্তা শ্রীলঙ্কার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করেছিল। কিন্তু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকেও জানানো হয়নি। পরে কর্তৃপক্ষ শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থার এমন সন্দেহজনক আচরণের কারণ অনুসন্ধান শুরু করে।
উক্ত সংবাদপত্রের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, শহীদ উদ্দিন খান এবং তার স্ত্রী ফারজানা আঞ্জুমও মুসলিম পরিবার থেকে এসেছেন। স্বপরিবারে ব্রিটেনে বসবাসকারী এই দম্পতি বাংলাদেশে মৌলবাদ এবং ইসলামী খেলাফত সৃষ্টির জন্য সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থনসহ সন্ত্রাসী হামলার তহবিল সংগ্রহ করে চলেছেন। এছাড়াও তারা হানিট্র্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে ব্ল্যাক মেইল অন্যান্য অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জোড় করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সমর্থনের বিষয়ে রিক্রুট করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারটি ব্রিটিশ মাটি ব্যবহার করে জিহাদি এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, সন্ত্রাসী-অর্থায়নকারী শহীদ উদ্দিন খান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ও আত্মঘাতী হামলায় অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়ে আল কায়েদার পাশাপাশি ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তাসনিম খলিল নামে এক সন্দেহভাজন হলুদ সাংবাদিক ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে শহীদ উদ্দিন খানকে প্রথম মিডিয়া এক্সপোজার দিয়েছিলেন। পরে খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে নিজ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন।
ইন্টারপোল-ওয়ান্টেড শহীদ উদ্দিন খানের মিথ্যা দাবি
সোশ্যাল মিডিয়ায় শহিদ উদ্দিন খানের মিথ্যা দাবির পর যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে পিএইচডি প্রদানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ হতবাক ও বিস্ময় প্রকাশ করে। এদিকে, ইস্টার্ন হেরাল্ডের সম্পাদক মুজাফফর আহমেদ নূরী বাজওয়াও বিষয়টি তদন্ত করছেন। শহীদ উদ্দিন খানের পিএইচডি ডিগ্রির দাবির অবস্থা সম্পর্কে বাজওয়া বলেছেন:
”যুক্তরাজ্যের প্রশাসনের কয়েকজন কৌশলী ব্যক্তি দ্বারা বিষয়টি নিয়ে গভীর গবেষণা ও তদন্তের পর, আমরা শহীদ উদ্দিন খানের দাবিকৃত থিসিসের ‘সামরিক হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর এর প্রভাব’ শিরোনামের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।” এ সংক্রান্ত সকল তথ্য ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ প্রাক্তন ছাত্র নেটওয়ার্কেও (https://www.port.ac.uk/about-us/alumni) বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। এছাড়াও ডিগ্রি নম্বর লেখার জন্য শহীদ উদ্দিন খানের তথাকথিত সার্টিফিকেটে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্যুকৃত প্রকৃত সনদের চেয়ে আলাদা ( আসল এবং দাবিকৃত সনদের তুলনামূলক ছবি সংযুক্ত)। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, হলোগ্রাম এবং ডিগ্রি নম্বরের মধ্যে ব্যবধান স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান “ফাঁকা” যখন মূল ডিগ্রিতে এটি এমন নয়। এছাড়াও শহীদ উদ্দিন খানের জাল সার্টিফিকেট এবং আসল সার্টিফিকেটের কাগজের মান সম্পূর্ণ আলাদা। এই ভুয়া ডিগ্রি সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও প্রার্থীর নামের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম। এ সংক্রান্ত নিম্নলিখিত লিঙ্কসমূহে পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত থিসিস উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে তারা যথাক্রমে ৩টি ও ১৭টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেও শহীদ উদ্দিন খান বা মোঃ শহীদ উদ্দিন খান নামে কারো লেখার বিষয়ে কিছুই নেই:
https://researchportal.port.ac.uk/en/studentTheses/?type=%2Fdk%2Fatira%2Fpure%2Fstudentthesis%2Fstudentthesistypes%2Fstudentthesis%2Fdoc&nofollow=true&format=&year=2022
https://researchportal.port.ac.uk/en/studentTheses/?search=military&isCopyPasteSearch=false&format=&year=2021&nofollow=true
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের একটি গুগল স্কলার প্রোফাইল রয়েছে তবে শুধুমাত্র শহীদ উদ্দিন খানের কোনও গুগল স্কলার প্রোফাইল নেই। 2020 সালের পর নতুন ডিগ্রিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে 3D প্রভাব থাকলেও শহীদ উদ্দিন খানের ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর ২০১৬ সংস্করণ ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে এই কাগজটি নিয়ে আলোচনা করা হলে তিনি তার প্রাথমিক বিশ্লেষণে এই নথিটিকে জাল বা জাল বলে মনে করেছেন।
ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড শহীদ উদ্দিন খান শুধু একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী এবং সন্ত্রাসের অর্থদাতাই নন, তিনি একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত সনদের জালও কারকও। এ ধরনের কাজ গুরুতর অপরাধের সমতুল্য। যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কি এখন এই বিপজ্জনক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে?