logo
Tuesday , 5 July 2022
  1. সকল নিউজ

সাফাই গাইতে গিয়ে উল্টো ইউনূসের বস্ত্রহরণ!

প্রতিবেদক
admin
July 5, 2022 10:04 am

শুরু থেকেই অনেক উচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে পদ্মা সেতু তৈরির বিরোধিতা করে গেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেল লরিয়েট হওয়ায় নিজের ইমেজ ব্যবহার করেছেন তিনি এক্ষেত্রে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে যখন বিশ্বব্যাংক কোনো অর্থ ছাড় করেনি, সেই সময় থেকেই দুর্নীতির এক আজগুবি অভিযোগ তোলা হয়। অর্থ ছাড় না হলে কীভাবে সেখানে আর্থিক দুর্নীতি হয়- সেটা পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করবে? কিন্তু ইউনূস এবং বাংলাদেশের দুটো দুষ্ট পত্রিকা- প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের পরিকল্পনায় গল্পের গরুকে গাছের মগডালে তোলা হয় সুকৌশলে।

তাদের লক্ষ্য ছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ ব্যাহত হোক এবং বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশে যাক। সেজন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হোমরা-চোমরাদের শরণাপন্ন হয়ে পুরো গেমটি সাজিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র বিফল হয়, আর পদ্মা সেতু আজ এক বাস্তবতা। যাই হোক, এ সবই চর্বিত-চর্বণ, সবাই জানেন। ড. ইউনূস আজ বাংলাদেশে ঘৃণিত এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তার মুখোশ খুলে যাওয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যদের কাছে তার আবেদনও ফুরিয়েছে। এমতাবস্থায় এত বছর পর ড. ইউনূসের মালিকানাধীন ইউনূস সেন্টার এই ষড়যন্ত্রীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে নেমেছে।

ইউনূস সেন্টার এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যা যা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবই নাকি অপপ্রচার! তারা জাতিকে নয়-ছয় বোঝানোর জন্য এই বিবৃতি ছেড়েছে, আর তা সোনামুখ করে প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। এমন বিবৃতি দেয়ার আরেকটি কারণ রয়েছে। এটা তার ভাবমূর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ইউনূসের বিরোধিতার যত প্রতিবেদন প্রকাশ হবে, তার লেজুড় হিসেবে যুক্ত থাকবে- ইউনূস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে। বিদেশে অনেক উচ্চশ্রেণির লিংক আছে ইউনূসের। তাদের সামনে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা সাজা জরুরি তার জন্য।

ইউনূসের দোসর ড. কামাল হলেন আরেক ষড়যন্ত্রী। বাংলাদেশের যত শ্রমিক বিদেশে থাকেন, তারা কাজ করে টাকা পাঠান দেশে। বিদেশে তারা নানাভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু কামাল বা ইউনূসরা তেমন কিছু করেছেন কোনোদিন, তা কি কেউ জানেন অথবা শুনেছেন কখনো? অথচ তারা তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্যে কতকিছু করতে পারতেন। কিন্তু এরা যা কিছু করেন-করেছেন, সবই নিজের জন্যে। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের জন্যে। এই ড. কামাল হলেন ড. ইউনূসের আইনজীবী। আমে-দুধে একেবারে মাখামাখি।

ইউনূস সেন্টারের দেওয়া বিবৃতিতে কোনো সারবত্তা নেই। তবুও বিবৃতিটির আলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যাক।

গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে ইউনূস সেন্টারের দাবিতে যে কারো মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, গ্রামীণ ব্যাংক যেন স্পেসশিপে করে ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে আগত কোনো প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের নিয়মনীতি, আইন-কানুন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। নিজেদের খেয়াল খুশিমতো চলবে তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি দেশের সব ব্যাংক মানতে বাধ্য হলেও গ্রামীণ ব্যাংক যেন সেসব মানতে বাধ্য নয়। তারা জনগণের টাকা ইচ্ছেমত নিজেদের কাছে গচ্ছিত রাখবে কিন্তু পরিচালিত হবে নিজেদের বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী।

বিষয়টা পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে না? একই কাজতো ডেসটিনি-ইভ্যালি-ইঅরেঞ্জের মত প্রতিষ্ঠানগুলোও করতো। গ্রামীণ ব্যাংককে ইনডেমনিটি দিলে ডেসটিনি-ইভ্যালি-ইঅরেঞ্জকে কেন জালিয়াত বলা হবে? তাদের বিরুদ্ধে এতো ব্যবস্থা কেন! গ্রাহকদের অধিকাংশইতো তাদের পক্ষে আছে। তবুরও সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, কারণ তারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি।

প্রশ্ন হলো, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য কেন আলাদা নিয়ম হবে? দেশের প্রচলিত আইনের মধ্যেই দেশীয় প্রতিষ্ঠান চলবে। ব্যাংকের এমডি থাকতে ৬০ বছর বয়সসীমার নিয়মনীতি নাকি গ্রামীণের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, তাদের পরিচালকরা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. ইউনূসই বারবার এমডি থাকিবেন। গ্রামীণ ব্যাংক চালানোর জন্য নাকি আর কোনো যোগ্য লোক নাই! আইনি লড়াই করেও হারলেন ইউনূস। ড. কামালের মত জাঁদরেল আইনজীবীরাও তার পক্ষে ছিলেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করা হলে তিনি আদালত পর্যন্ত যান। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট সব আদালতে তিনি হেরেছেন। সরকারি ব্যাংক সংক্রান্ত আইনেই আছে এমডির বয়স ৬০ বছরে বেশি হবেনা। ড. ইউনূসের বয়স তখন ৭০-এর বেশি। এরপর তিনি বন্ধু হিলারি ক্লিনটন, চেরী ব্লেয়ারসহ অনেককে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ফোন করান। হিলারী ফোন করেছেন দেখলে অন্য কেউ চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে যেত। কিন্তু শেখ হাসিনা ঠান্ডা মাথায় তাকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং আইন সম্পর্কে বোঝান। হিলারী রাগে গজগজ করতে করতে ফোন রাখেন।

একটি কথা ইউনূস সেন্টার সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে। আগ্রহীরা চাইলে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন। গ্রামীণ ব্যাংকের বহু ডিএমডিকে তারা হেনস্তা করে ব্যাংক থেকে বিদায় করেছেন। যারা গ্রামীণ ব্যাংকের শুরু থেকে জড়িত ছিলেন, যাদের অক্লান্ত শ্রমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত, ডিএমডি হবার পরপরই কোনো না কোনো অভিযোগ এনে হেনস্তা করে তাদের বিদায় করে দেওয়া হতো। কারণ নিয়মানুযায়ী তারাই ব্যাংকের পরবর্তী এমডি পদের দাবিদার ছিলেন। এই কাজটি করত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর পরিচালনা পর্ষদ নিজের ইচ্ছায় বানাতেন ইউনূস।

পত্র-পত্রিকার কল্যাণে সবাই জানেন, দেশের প্রতিটি দুর্যোগ বা ক্রাইসিস মোমেন্টে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে আসে। মাত্র কয়েকদিন আগেও বন্যার্তদের জন্য ব্যাংক মালিকরা ৩০০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ শোনেনি, দেশের কোনো দুর্যোগে ড. ইউনূস জনগণের পাশে ছিলেন কি না! অথচ সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’কে তিনি ২০১১ সালে ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। আর এই তথ্যটি ইউনূস সেন্টার তাদের বিবৃতিতে পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

আগ্রহীদের জন্য তাহলে সূত্রটি দেওয়া যাক- ২০১৬ সালের ১৭ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ডেইলি কলার’ ক্লিনটন ওয়েবসাইটের [লিংক- https://dailycaller.com/2016/04/17/exclusive-disgraced-clinton-donor-got-13m-in-state-dept-grants-under-hillary] বরাতে জানিয়েছিল, ড. ইউনূস কীভাবে সেখানে ৩ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছিলেন। সেই সংবাদের প্রতিবাদ কিন্তু সেসময় কিংবা পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূস বা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কেউই করেননি।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশের তোয়াক্কা করেনি ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। তাদের সুদের হার ছিল সবার চেয়ে অনেক বেশি- ২০ থেকে ২৭ শতাংশ। এই উচ্চ সুদ টানতে কত শত পরিবার যে নিঃস্ব হয়েছে, এর হিসাব নেই। পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যেত ছবি- সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকের গরু-ছাগল টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের লোকজন, গৃহস্থালী সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে, দেনার দায় শোধ করতে ব্যর্থ কৃষক গলায় ফাঁস দিয়েছেন গাছের ডালে… এমন ভুরি ভুরি ঘটনার সাক্ষী বাংলার জনগণ।

প্রবাদ আছে, যেখানে মোরগ ডাকে না সেখানেও সকাল হয়। ড. ইউনূস ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু আজ এক দশক ধরে সুন্দরমতো চলছে। কোনো আওয়াজ আছে? কোনো হৈ চৈ আছে?

সর্বশেষ - সকল নিউজ