হাঙ্গেরি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে জুলকারনাইন সায়ের খান ওরফে জুলকারনাইন সামি, ওরফে সামি ওরফে তানভীর মো সাদাত ওরফে তানভীর বাংলাদেশে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার” বলে মিথ্যাভাবে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছিলেন। কিন্তু (weeklyblitz) বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, সামি,”আল জাজিরার আই-ইউনিট-এর গবেষণা বিশ্লেষক”, এছাড়াও তিনি “বাংলাদেশী অনুসন্ধানী সাংবাদিক” হিসাবে মিথ্যাচার করে আসছেন, যদিও তিনি বাংলাদেশে বা অন্য কোথাও সাংবাদিক ছিলেন না।
লন্ডনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জুলকারনাইন সায়ের খান সামি একজন অস্পষ্ট ব্রিটিশ সাংবাদিকের সাথে জোট বেঁধেছেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন তথ্যচিত্র তৈরির জন্য কাতার ভিত্তিক সম্প্রচার নেটওয়ার্ক আল জাজিরাকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। নাম না প্রকাশ করা আল জাজিরার একজন সিনিয়র সাংবাদিক এই প্রতিবেদককে বলেছেন যে সামি “বারবার” আল জাজিরাকে ইমেল পাঠাচ্ছেন যে “বর্তমান সরকার দ্বারা বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে” এবং ইসলাম “হুমকির মধ্যে রয়েছে” বাংলাদেশে।
এখানে উল্লেখ্য , সামি হিজবুল মুজাহেদিন, লস্কর-ই-তৈবা এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) সহ বেশ কয়েকটি জিহাদি সংগঠনের সাথে সম্পর্ক তার ভালো সম্পর্ক।
সামির সাথে কাতার ভিত্তিক “সন্ত্রাস-সম্প্রচার নেটওয়ার্ক” তথা আল জাজিরার সাথে পরিচয় হয়েছিল প্রাথমিকভাবে তাসনিম খলিল নামে আরেকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির দ্বারা, যিনি তার ছাত্রজীবনে হিজবুত তাওহীদ নামে একটি খিলাফতপন্থী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, হিযবুত তাওহীদ গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়নের নিন্দা করে এবং সমগ্র বিশ্বকে ইসলামপন্থী খিলাফতের পতাকাতলে আনতে চায়।
ব্যক্তিগত জীবনে, তাসনিম খলিল নিজেকে একজন গেয় হিসাবে ঘোষণা করেন, যখন তিনি যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের মুখোমুখি হন।
জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মোঃ সাদাতের বাংলাদেশী পাসপোর্ট নম্বর EG0092902 (ইস্যু করার তারিখ 22 মে, 2020) ছিল। তার জন্ম আইডি নম্বর হল 19830007842012539। সামির আরও 3টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর B1765649, BJ050260, AC5075647 রয়েছে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর DK-0014714L00009। তার হাঙ্গেরিয়ান আইডি কার্ড নম্বর 000529284। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আদিতিয়া ফিরোজা খান, পাসপোর্ট নম্বর BJ0520244।
জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মো: সাদাতের পিতার নাম মোহাম্মদ আবদুল বাসেত খান হওয়া সত্ত্বেও, সামি তার পাসপোর্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে তার পিতার নাম পরিবর্তন করে “কর্নেল ওয়াসিত খান” রেখেছেন। তার অপরাধমূলক প্রাপ্ত তথ্য থেকে এই বিষয় গুলো জানা যায়।
তথ্যমতে, ২০০১ সালে সেনা কর্নেলের ইউনিফর্ম পরে ঢাকা সেনানিবাসে ঢোকার সময় জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মো সাদাত মিলিটারি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরে লিখিত মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ থেকে হাঙ্গেরিতে পালিয়ে যাওয়ার আগে জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মো: সাদাতকে 21শে জুলাই, 2006 সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তার পরিচয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে 21.07.2006 তারিখে একটি ফৌজদারি মামলা নং 43, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির 140, 170, 171, 419, 465, 467, 469 এবং 472 ধারায় দায়ের করা হয়েছিল।
জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মো: সাদাত নিজেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে অসংখ্য অপরাধ করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাঙ্গেরিতে জুলকারনাইন সায়ের খান সামি কয়েকটি রেস্তোরাঁ চালাচ্ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘কারি হাউস’ নামে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ, যা জেলা, VIII., 1. হোরানস্কি স্ট্রিট – বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরিতে অবস্থিত। গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আড়ালে জুলকারনাইন সায়ের খান সামি অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিলেন।
২০২২ সালের ২০ মে জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ওরফে তানভীর মোঃ সাদাত যুক্তরাজ্যে ‘SAMS INC LTD’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানির নম্বর 13411356। এই কোম্পানির প্রস্তাবিত নিবন্ধিত অফিসের ঠিকানা হল: Kemp House, 160 City Road, London, United Kingdom EC1V 2NX। ‘SAMS INC LTD’ প্রতিষ্ঠার মূল কারণ হল তার অবৈধ কার্যকলাপ যেমন মাদক পাচার, অর্থ পাচার এবং হাঙ্গেরি থেকে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সংযোগ বজায় রাখা।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতে, জুলকারনাইন সায়ের খান মাদকাসক্তির অভিযোগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত একজন প্রাক্তন ক্যাডেট। বাংলাদেশের মানুষ তাকে দেশে এনে বিচারের দাবি করছে।
