logo
Monday , 23 May 2022
  1. সকল নিউজ

গ্যাস বিদ্যুৎ সারে ভর্তুকি লাগবে ৫০ হাজার কোটি টাকা

প্রতিবেদক
admin
May 23, 2022 9:19 am

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ। প্রাকৃতিক গ্যাস ও সারের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের একটি বড় অংশ উৎপাদনে তেল ও গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার এই পণ্যই জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

ফলে সব দেশেই এখন এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে সরকারগুলো।

একইভাবে সারের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়বে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনে। এখন এই তিন পণ্যের দাম না বাড়লে বাজেটে বিপুল ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। অর্থ বিভাগের হিসাবে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে সরকারকে ৫০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হবে।

আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে বুধবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াও চলছে। আর সারের দাম বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় কিংবা দাম না বাড়ালে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তার একটি হিসাব কষেছেন। অর্থ বিভাগের হিসাবে বলা হয়েছে, নতুন বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের মূল্য বাড়িয়ে সমন্বয় করা না হলে এই তিন খাতেই খরচ হবে ভর্তুকির ৫০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমারা। সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে বাংলাদেশ বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে।

বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও বেড়েছে। রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী দেশ। যদিও বাংলাদেশ কাতার ও ওমান থেকে গ্যাস বেশি আমদানি করে। বাংলাদেশের গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলো এরই মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে।

অর্থ বিভাগের হিসাবে, নতুন বাজেটে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা না হলে এলএনজি আমদানি মূল্য পরিশোধ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ মিলিয়ে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালনি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ খাতে। অর্থ বিভাগের হিসাবে, মূল্য সমন্বয় না করা হলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি লাগবে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি খাতে এটিই সর্বোচ্চ। এ টাকা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের দ্বিগুণ।

দেশের সারের বাজারও আমদানিনির্ভর। দেশের বার্ষিক প্রায় ৬০ লাখ টন সারের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই সরকারি সংস্থার নির্ধারিত মূল্যে আমদানি ও বিক্রি করা হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রতি কেজি ইউরিয়া আমদানির মূল্য আগের অর্থবছরের ৩২ টাকা থেকে চলতি অর্থবছরে বেড়ে ৯৬ টাকা হয়েছে। কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।

অর্থ বিভাগ বলছে, আগামী অর্থবছরে যদি সারের মূল্য সমন্বয় করা না হয়, তাহলে কৃষি প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কৃষি খাতে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দাম সমন্বয় করা না হলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকিতে যে পরিমাণ বরাদ্দ লাগবে, তার বেশির ভাগ যাবে এই তিন খাতে। দাম সমন্বয় করা হলে কত খরচ পড়বে এবং সমন্বয় না করা হলে খরচ কত পড়বে, তার হিসাব অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে দেওয়া হয়েছে। সরকার এখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই তিন পণ্যের কোনোটিরই দাম বাড়ানোর পক্ষে নন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। শনিবার ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার কৌশল ঠিক আছে। এই জটিল সময়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সরকারের কাছে হয়তো বিকল্প কোনো পথ থাকবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কভিড থেকে অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো। এতে আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। সে তুলনায় রপ্তানি আয় হচ্ছে না। আবার ডলারের দামও বাড়ছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এমন সময়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, সারের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়লেও সমস্যা নেই। তবে আমদানি করা সার ও জ্বালানির ওপর শুল্ক কমানো উচিত। ’

সর্বশেষ - সকল নিউজ