logo
Saturday , 14 May 2022
  1. সকল নিউজ

ক্যাসিনো সাম্রাজ্যে উচ্ছ্বাস, শক্তি পুনরুদ্ধারে জোর প্রস্তুতি

প্রতিবেদক
admin
May 14, 2022 10:34 am

ক্যাসিনোকাণ্ডে কোণঠাসা যুবলীগের বিতর্কিত নেতারা এখন প্রকাশ্যে আসতে মরিয়া। রাজনৈতিকভাবে অপরাধের দায়মুক্তিও চান তারা। এজন্য তাদের কেউ কেউ দলীয় ফোরামে দীর্ঘদিন ধরে দেন-দরবার করছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সম্রাটের কারামুক্তি তাদের জন্য বড় এক পাওয়া। সম্রাট অনুসারীদের সবাই উচ্ছ্বসিত। আনন্দের বন্যা বইছে তাদের মধ্যে।

বুধবার বিকাল থেকে এই আনন্দ উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। যেখানে চিকিৎসাধীন আছেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। তার অনুসারীরা হারানো শক্তি পুনরুদ্ধারে ইতোমধ্যে জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব ক্লিন ইমেজের সঙ্গে সংগঠন চালানোর পক্ষে। এ কারণে সম্রাটসহ বহিষ্কৃত নেতাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন ততটা সহজ হবে না। তাছাড়া শুদ্ধি অভিযানে সম্রাটের অনুসারীদের অনেকেই হারিয়েছেন পদ-পদবি। সম্রাট নিজেও গুরুতর অসুস্থ। সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ পথটা মসৃণ নয়। এজন্য পর্দার আড়ালে ভিন্ন হিসাব-নিকাশও চলছে। কেননা কোনো কারণে পাশা উলটে গেলে কী হবে সেটিও আর একবার ঝালাই করে নিতে চান কেউ কেউ।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ক্যাসিনোসহ অবৈধ কোনো ব্যবসা চলতে দেওয়া হবে না। বুধবার বিকালে যুগান্তরের কাছে তিনি এমন দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনোকে আইনগতভাবে বৈধতা দেওয়া হবে কিনা সেটি তার জানা নেই। এটি ভবিষ্যতের বিষয়।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্রাটসহ ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টরা দলে ফিরতে পারবে কিনা সেটি দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এ বিষয়ে তার মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাসিনো মামলার বেশিরভাগ আসামি এখনো পলাতক। কেউ কেউ জামিনে মুক্তি পেয়ে চলে গেছেন বিদেশে। বেশ কয়েকজন দেশে থাকলেও চলাফেরা করছেন পর্দার আড়ালে। হাতেগোনা দু-একজন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।

অভিযানের মুখে পদ হারানো খোদ যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখনো মাঠের বাইরে। জেল থেকে ফিরে কৃষক লীগের সাবেক ডাকসাইটে নেতা সফিকুল ইসলাম ফিরোজ চলে গেছেন ‘স্বেচ্ছা অবসরে’। ফলে কলাবাগান এলাকায় তার একক আধিপত্য এখন পড়তির দিকে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুদকের জালে আটকে আছেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টি নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টু। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে পলাতক থাকলেও তিনি এখন দেশেই আছেন।’

সূত্র বলছে, ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ডাকসাইটে অনেক নেতা পদবি হারান। এদের মধ্যে অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার ও কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেন। অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমালোচনার মুখে তারা অনেকটাই রাজনীতির মাঠের বাইরে।

র‌্যাব জানায়, অভিযানের পর থেকেই পলাতক মতিঝিলের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তাকে কয়েক দফা গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি র‌্যাব। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সাঈদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ফটিক, সুমন এবং যুবলীগ নেতা জামাল বেশ কিছুদিন পলাতক থাকলেও এখন তারা এলাকায় প্রকাশ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।

ফকিরাপুলের ইয়্যাংম্যানস ক্লাবে ক্যাসিনো আয়োজক যুবলীগ নেতা বকুল ওরফে বরিশল্ল্যা বকুল এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের ক্যাসিনো হোতা আলী মিয়াও ফিরেছেন ক্লাবপাড়ায়। তারা সক্রিয় রাজনীতির মাঠেও। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ক্যাসিনো মামলা বিচারাধীন।

এলাকায় ফিরেছেন ওয়ান্ডারারর্স ক্লাবের ক্যাসিনো আয়োজক মোবারক ও করিম। উত্তরা এলাকার ক্যাসিনো হোতা কামালকে যুবলীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এখন দেখা যায় নিয়মিত। এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চলাফেরা করছেন তিনি। এদিকে মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম রফিউল ইসলাম ওরফে সোহেলও ফিরেছেন দেশে। তবে পদ হারিয়ে দলীয় ফোরামে কোণঠাসা তিনি। সম্রাটের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শাহিন আহম্মেদ দীর্ঘদিন ধরে পলাতক মালয়েশিয়ায়। যুবলীগের সাবেক ক্ষমতাধর নেতা খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়া এবং এনামুল হক আরমান এখনো কারাবন্দি।

সূত্র বলছে, ক্যাসিনো মামলার আসামি যুবলীগ নেতা ইমরান এবং জাকির রাজনীতি বাদ দিয়ে এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। তারা কখনো দেশে, আবার কখনো থাকেন বিদেশে। এভাবে কাটছে দিন। এছাড়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গ্রেফতার ঠিকাদার সিন্ডিকেটের হোতা জিকে শামীম জেলে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ব্যবসা।

সূত্র বলছে, কাসিনোকাণ্ডে সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম আসে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার। তাদের বেশ কয়েকজন শাস্তিমূলক বদলির মুখে পড়েন। তবে তাদের বেশিরভাগই বিভাগীয় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। কয়েকজনকে লঘু দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম রমনার সাবেক এডিসি শিবলি নোমান। তাকে দোষী সাব্যস্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। অবশ্য অন্যরা ইতোমধ্যে প্রাইজপোস্টিং পেতে সক্ষম হয়েছেন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ