logo
Wednesday , 10 February 2021
  1. সকল নিউজ

জাফরুল্লাহ ও খোকনের ওপর চটেছে বিএনপি!

প্রতিবেদক
xanox
February 10, 2021 12:56 pm

ডা. জাফরুল্লাহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। তিনি বিএনপি ঘরানার একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে দলের অন্যতম থিংক ট্যাঙ্কও মনে করে। করোনার সময় শুরু থেকেই জাফরুল্লাহর ওপর ভর করেছিল বিএনপি। করোনা নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে জাফরুল্লাহ যে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন সেই পথেই চলেছে বিএনপি। সরকারের সমালোচনার পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ প্রথমে বলেছিলেন, র‍্যাপিড টেস্ট করতে হবে এবং তিনি সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। র‍্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবনের দাবি করেছিলেন। যদিও সেই কিট পরীক্ষায় সফল হয়নি। কিন্তু বিএনপি জাফরুল্লাহর সুরেই র‍্যাপিড টেস্টের কথা বলেছিল। ডা. জাফরুল্লাহ করোনা নিয়ে যে সমস্ত পরামর্শ এবং সরকারের সমালোচনা করেছিল সেগুলোই বিএনপির নেতাদের মুখে অনুরণিত হয়েছিল।

যখন টিকা আসা শুরু হলো তখন ডা. জাফরুল্লাহ এবং ফরহাদ মাজহার, দুজনই এর বিরোধিতা করে নানারকম বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিল। ফরহাদ মাজহার অক্সফোর্ডের এই টিকাকে ভারতীয় উদ্ভাবন এবং ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতীক ইত্যাদি বলে নানা সমালোচনা করেছিল।

অন্যদিকে ডা. জাফরুল্লাহ বলেছিলেন, এই টিকা গ্রহণ করা ঠিক হবে কি না তা আগে বুঝতে হবে, এটা কতটুকু মানসম্মত, আদৌ মানুষের নাকি মুরগির- তাও বুঝতে হবে। কিন্তু দুটি কিডনি বিকল হয়ে থাকা চিকিৎসক ডা. জাফরুল্লাহ প্রথম দিন যারা যারা টিকা নিয়েছেন তাদের অন্যতম। তার টিকার নিবন্ধন নেওয়ার বিষয়টি বিএনপির কেউ জানতো না।

তাই পত্রিকায় ছবি আসায় দলের নেতাকর্মীরা হতবাক হয়ে গেছেন। তারা অধিক শোকে গ্রানাইট পাথর হয়ে গেছেন, জাফরুল্লাহ টিভি ক্যামেরার সামনে বিএনপিকে টিকা নিতে আহ্বান জানানোয়।

একই অবস্থা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের গতকাল টিকা গ্রহণের ঘটনাতেও। ‘সুই আস্তে দিয়েন’ বলে টিকা গ্রহণ করেছেন খোকন– এমন সংবাদ পত্রিকায় ছবিসহ প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপিতে। দলের নেতাকর্মীরা টিকা নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনীতির যে ছক কষেছিলেন, তা ‘ডুবেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এমনকি আজ দুপুর পর্যন্ত বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে কৈফিয়ত চেয়ে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি বলে জানান দলীয় কার্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।

এদিকে জানা গেছে, ডা. জাফরুল্লাহ নিজেই আগ্রহী হয়ে টিকা নিয়েছেন। টিকা নিয়ে তিনি বলেছেন, এই টিকা ভালো এবং এতে আত’ঙ্কের কিছু নেই। আপনারা টিকা নিন।

বিভিন্ন মহলে ডা. জাফরুল্লাহর একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পর তার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ওষুধনীতি প্রণয়ন ইত্যাদি কারণে স্বাস্থ্যখাতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মনে করা হয়। তিনি যখন এই টিকা নিতে বলেছেন, তখন সরকারবিরোধী পক্ষের সমস্ত অপলাপ, গুজব, অপপ্রচার, সমালোচনাগুলো ম্লান হয়ে গেছে। ফলে, টিকা-রাজনীতি নিয়ে সরকারবিরোধী পক্ষের হাতে আর কোনো ইস্যুই রইল না।

একই কথা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা মাহবুব উদ্দন খোকনের জন্যও প্রযোজ্য। খালেদা জিয়ার পক্ষে এবং বিএনপির স্বার্থের বিষয়ে আপোসহীন এই নেতার টিকা গ্রহণকে বিএনপির রাজনীতির পায়ে কুড়াল বলে মত অনেকেরই।

দলের নেতারা মনে করেন, ডা. জাফরুল্লাহ যদি টিকা না নিতেন, তাহলে তারা টিকা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করতে পারতেন এবং টিকা না নেয়ার প্রচারণা চালাতে পারতেন। তবে সেটি ঘটেনি। বরং জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার খোকনের টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকার পক্ষেরই জয় হয়েছে এবং টিকার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে বলে মত সবার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, মন্ত্রী-এমপিদের টিকা নেওয়ায় মানুষ যতটা সচেতন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ এবং ব্যারিস্টার খোকনের টিকা নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তারা হুট করে কেন এই কাজটি করলেন, তা নিয়ে বিএনপি বিব্রত এবং রীতিমত ক্ষু’ব্ধ।

দলীয় কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উনারা (ডা. জাফরুল্লাহ ও ব্যারিস্টার খোকন) এমন ডিগবাজি দিবেন এটা যদি আমরা আগে জানতাম, তাহলে তাদের ওপর আমরা নির্ভর করতাম না। এর আগেও, বিশেষ করে ডা. জাফরুল্লাহ বহুবার এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন যা দলীয় এজেন্ডাবিরোধী।

যেমন- তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বলেছেন বিএনপিকে। এসব বিএনপির জন্য পলিটিক্যালি বি’ব্রতকর। এখন তারা এই টিকা নিয়ে বিএনপিকে বিপাকে ফেলেছেন।

এদিকে বিএনপির দুই প্রধান নেতা রুহুল কবির রিজভী এবং মির্জা ফখরুলও টিকা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে- বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করতে অ’পারগতা জানান।

সর্বশেষ - সকল নিউজ