ডেস্ক রিপোর্ট:
তৃণমূল নেতাকর্মীদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পৌরসভা নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নিয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঠিক করতে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়কদের উদ্দেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে- প্রার্থীদের সুপারিশে সংশ্নিষ্ট প্রার্থীর আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্র, হালনাগাদ ভোটার তালিকাসহ মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখের পাঁচ কার্যদিবস আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। পৌরসভা প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা-উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব অথবা সিনিয়র যুগ্ম সচিব এবং পৌরসভা-ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সদস্য সচিব অথবা সিনিয়র যুগ্ম সচিব ও ২নং যুগ্ম সচিবকে আলোচনাক্রমে লিখিত সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোথাও এ পাঁচজন ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে।
দলের এ নির্দেশনায় গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী, মাদারীপুর জেলার রাজৈর, ফরিদপুর জেলার সদর, মধুখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা প্রার্থিতা বাছাইয়ের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। এরই মধ্যে গত শনিবার মাদারীপুরের রাজৈরে মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে, মধুখালীতে শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ সতেজকে এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে আবুল কালাম আজাদকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৫৯টিতে ভোটের আয়োজন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। এসব পৌরসভায় ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চার-পাঁচ ধাপে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেশিরভাগ পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে।
গত ৫ নভেম্বর স্থানীয় সরকারের প্রায় একশ প্রতিষ্ঠানে আগামী ১০ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে পাঁচটি পৌরসভাও রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বর শেষ দিকে প্রথম দফার সম্ভাব্য ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোট নেওয়া হতে পারে। চলতি সপ্তাহে এসব পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। পৌরসভা নির্বাচনের পর এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, কভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। তবে অনেক এলাকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শুধু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে কিংবা দলীয় নির্দেশনা পালনের জন্য নামকাওয়াস্তে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। আবার অনেক এলাকায় দল মনোনয়ন না দিলেও অনেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকে এলাকায় গণসংযোগের মতো কর্মসূচি পালন করছেন, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও তারা নির্বাচন করবেন বলে জানাচ্ছেন।
বিএনপির জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না বলে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না তারা।
বরিশাল বিভাগীয় এক নেতা জানান, বরিশালের ছয় পৌরসভায় বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর মধ্যে পৌর নির্বাচন নিয়ে কোনো চাঞ্চল্য নেই। আগের অভিজ্ঞতায় ভোটারদের মধ্যেও এ নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর উজিরপুর, বানারীপাড়া, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জে পৌর নির্বাচন হয়। সবগুলোতেই মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এবার উজিরপুরের পৌরনির্বাচনে এখনও নিশ্চুপ রয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোভাবের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও একটা চাঙ্গাভাব তৈরি হবে। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে দলে গতি আসবে। সবকিছু বিবেচনা করেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।