logo
Thursday , 15 October 2020
  1. সকল নিউজ

মিথ্যা ও গুজবে ভরা কোটা সংস্কার আন্দোলন

প্রতিবেদক
admin
October 15, 2020 1:03 pm

১০ এপ্রিল রাত ১২টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলো কবি সুফিয়া কামাল হলের নেত্রী ইসরাত জাহান এশা ওই হলেরই একজন ছাত্রী মরিয়ম খানমের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এমন সংবাদ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে গেল কবি সুফিয়া কামাল হলের গেটে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হলো। তারা প্রতিবাদ জানালো ওই ঘটনার। কারণ, একজন শিক্ষার্থী আরেকজন শিক্ষার্থীর ওপর এভাবে নির্যাতন করতে পারে না। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিবাদের ভাষাও থেমে থাকে না।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সুফিয়া কামাল হলের সামনে হাজারও শিক্ষার্থী সোচ্চার। এ ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কিছু ছাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছিল আমাদের কারও ওপর কোন আঘাত আসলে আমরা সবাই একসঙ্গে তা প্রতিহত করব। তাই সেদিন কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করলো- হল এশা এক শিক্ষার্থী মরিয়ম খানমের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। হলের শিক্ষার্থী বোনেরা এ খবর শুনতে পেরে সবাই প্রচন্ড ক্ষোভে এশার ওপর আক্রমণ করেছিল। এ ধরনের বর্বরতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তারা ইসরাত জাহান এশাকে বিবস্ত্র করেছিল এবং জঘন্যভাবে লাঞ্ছিত করেছিল এবং সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করেছিল।

সেদিন তাদের এই প্রচারণার সত্যাসত্য বুঝে ওঠার আগে অনেক ছাত্রই এমন বর্বরোচিত ঘটনার জন্য ধিক্কার জানিয়েছিল। এশাকে বাঁচাতে হলে ছুটে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই পিছু হটেনি। এশাকে বিবস্ত্র ও লাঞ্ছনা করার পরেও তারা সেদিন কোনভাবেই এশাকে ছাড়তে চাচ্ছিল না।

এশার ওপর হামলাকারীরা দাবি করেছিল এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তার নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তা না হলে কোনভাবে এশাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্য স্থানে নেয়া যাবে না। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এশাকে বাঁচানোর জন্যই তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয় এবং পরদিন সেটি বাস্তবায়ন হয়। ছাত্রলীগও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের জন্ম দেয়া এমন ঘটনার কারণে এশাকে বহিষ্কার করে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়, নির্যাতিত যে মেয়ের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয় তার ভিডিও চিত্র। মেয়েটি বলে, তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই এশার রুমের জানালার গ্লাসে লাথি মেরেছিল এবং তার পা কেটে যায়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দখল করে নেয় এই ভিডিওটি। চারদিকে প্রচারিত হতে থাকে সেদিনের সেই ভিডিও চিত্রটি।

ওই হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাই মিথ্যা তথ্য পেয়ে এভাবে তাদের আরেক ছাত্রী বোন এশাকে বস্ত্রহরণ এবং ঘৃণ্যভাবে লাঞ্ছিত করেছে। ছাত্ররা এরপর থেকে এই ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করে। জানা যায়, ওই হলের কিছু শিক্ষার্থী মিথ্যা তথ্য অপপ্রচার করে সেদিনের ওই ঘটনাকে একটি কলঙ্কিত ঘটনায় পরিণত করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মহোদয়ের বাসায় হামলার মতোই মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আরেকটি ঘটনার জন্ম দিতে চেয়েছিলেন। ছাত্র সমাজও হতাশ হয়েছিল কীভাবে এমন ভুল বোঝাবুঝি থেকে একের পর এক এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাচ্ছে।

এর পেছনে তারা একটি কারণ খুঁজে পেয়েছে, দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকা নিজস্ব রাজনীতিক পরিচয়ের আড়ালে, স্বাধীনতাবিরোধী চেতনাধারী এই সমস্ত কিছু ছাত্রীর অপপ্রচারকেই। ওই হলের প্রশাসন সেসময় অপপ্রচারকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা বিভিন্ন মিথ্যা স্ট্যাটাস দেয়ার কারণ জানতে তাদের তলব করে, সে সময় তারা হল প্রশাসনের কোন সদুত্তর দিতে পারবে না বলেই তারা নিজেরাই হল থেকে পালিয়ে যেতে থাকে। আর এভাবেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দুটি ঘটনা ঘটে যায়, যে ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল।

মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তীব্র ছাত্র বিক্ষোভের জন্ম দিয়ে লাশের রাজনীতি করার চেষ্টাও তারা লিপ্ত ছিল। বিজয় একাত্তর হলের ১১-১২ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছিল, ‘আমার হলের সামনে গুলি করছে পুলিশ। খোদার কসম, হয়ত মরব, নয়ত মারব। বেঁচে থাকলে দেখা হবে। খোদা হাফেজ।’ এমনি করেই ছাত্রশিবিরের দীর্ঘদিনের লুকিয়ে থাকা কিছু শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনের এই অরাজনৈতিক প্লাটফর্মকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিল। ঢাবি তথা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারল। সেসময় তাদের আবেগকে পেছনে ফেলে তাদের বিবেক জাগ্রত হলো। তারা সবাই বুঝতে পারল, এই আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট হয়ে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই অরাজকতা এবং নাশকতা জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যে কোটা আন্দোলনের এই প্লাটফর্মটি সম্পূর্ণ ব্যবহার করছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের পরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মোঃ রাশেদ খান ১৮ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সারাদেশে ছাত্র সমাজকে অনতিবিলম্বে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। ভিডিও বার্তাটিতে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, যে কোন উপায়েই তারা ঢাবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, ভিডিও বার্তার একপর্যায়ে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছিল, ‘দেশটা কী তার এবং তার বাপের? এ দেশে কি শুধু তারাই কথা বলতে পারবে? আমরা কিছু বলতে পারব না?’

এই ভিডিও বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর বাংলার ছাত্র সমাজের কাছে আর বুঝতে বাকি রইল না কোটা আন্দোলনের এই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে চরম পর্যায়ে নাশকতা তৈরি কোটা আন্দোলনকারী নেতাদের অভীষ্ট লক্ষ্য। ছাত্রদের এই দাবি শান্তিপূর্ণভাবেই এগিয়ে চলুক এটা তারা যে চায়না, বাংলার ছাত্র সমাজ আরও বেশি অবগত হয়ে যায়।

২০০১-২০০৬ সালে জামায়াত-বিএনপি শাসনামলে সরকারী চাকরির নিয়মিত প্রজ্ঞাপন হতো না। অনিয়মিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারী চাকরির পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হতো, যাতে ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাকরির ব্যবস্থায় মারাত্মকভাবে দলীয়করণ করা হতো। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারী চাকরি ব্যবস্থায় স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে মেধাবীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারী চাকরি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে এতটাই বেশি যতœবান যে, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারী চাকরিতে অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা তার সরকারের কাছ থেকে পায়নি।

কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ তার ১টি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সে ছাত্রদের জানান দেয়, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে আসছে। সবাইকে সে রাস্তায় নেমে আসতে আহ্বান জানায়। কিন্তু ছাত্র সমাজ সেদিন আর এগোয়নি। ছাত্র সমাজ প্রত্যাখ্যান করে কোটা আন্দোলনের তথাকথিত নেতাদের। এর পরবর্তীতে কোটা আন্দোলনের পূর্বের একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে তারা বারবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে কোটা আন্দোলনে শামিল করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচার যখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, তখন থেকে কোটা আন্দোলনের নেতাদের থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন হারিয়েছে।

বাংলার ছাত্র সমাজ জানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেটি অন্তরে ধারণ করতেন, সেটি মুখে বলতেন এবং সেটি বাস্তবায়ন করতেন। তাঁর সুযোগ্যকন্যা বিশ্বনন্দিত নেতৃত্ব দেশরতœ শেখ হাসিনাও যেটি মুখ দিয়ে বলেন, সেটির বাস্তবায়ন করেন। আর তাই শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই আজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যারা নাশকতা করতে চেয়েছে, তাদের বাংলার ছাত্র সমাজ সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করবে।

লেখক : ছাত্রনেতা

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত

পাকিস্তান তো দেউলিয়া হয়েই গেছে, সমাধান আইএমএফের কাছে নেই

বিএনপি বারবার সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির রাজনীতি ফেসবুকে সীমাবদ্ধ!

গত ১৩ বছরে কৃষিতে ৯৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার

মওকুফ সুবিধার মেয়াদ শেষ আবারও ভোজ্যতেলের ভ্যাট ১৫ শতাংশ

মধ্যবর্তী নির্বাচন কোন দুঃখে, মামা বাড়ির আবদার : বিএনপিকে সেতুমন্ত্রী

ঝিনুকের আদলে কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন প্রথম রেলস্টেশন দৃশ্যমান

বিএনপি ভয়ংকর গুপ্ত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে : সেতুমন্ত্রী

আজ মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পেঁয়াজ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন ভোক্তা, বিপাকে পড়বে ব্যবসায়ীরা