রাজধানী থেকে বরিশাল ফিরছিলেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সালেহ আকরাম। সদরঘাট থেকে সুন্দরবন-১১ লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চে একটি ডাব কিনে খান তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। গত ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সালেহ আকরামের স্ত্রী তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর পরদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে সালেহ আকরাম টের পান অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি। খোয়া গেছে পকেটের সব টাকা।
ঢামেকের রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ তাঁর ঘটনার বিবরণ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এভাবে ঈদ ঘিরে এখন সারা দেশে লঞ্চ, বাস কাউন্টার, রেলস্টেশনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীসহ মৌসুমি অপরাধীচক্র।
শুধু ওই পুলিশ কর্মকর্তা নন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত ২০ দিনে ঘটা এমন ১৭টি ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে ঢামেকের রেজিস্টার খাতায়। এসব ঘটনায় ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আহতদের মধ্যে ৯ জন যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তাঁদের মধ্যে চারজন ছিনকাইকারী ও পাঁচজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে দুটি। বাকি সব অন্য এলাকার ঘটনা।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ঈদ ঘিরে এর মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাত্রীরা যেন দ্রুত সময়ে নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারেন, এ জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এএসআই সালেহ আকরাম অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ার আগের দিন মতিঝিল বক চত্ব্বরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন জাহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক। ওই দিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা মো. আশরাফুল কালের কণ্ঠকে বলেন, জাহিদুল পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী।
নতুন আতঙ্ক হ্যান্ডশেক পার্টি : রাজধানীতে নতুন আতঙ্ক এখন হ্যান্ডশেক পার্টি। তারাও ছিনতাইকারীর মতো মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। সম্প্রতি এই চক্রের ৩৩ জন সদস্যকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদ ঘিরে র্যাবের টহল টিম তৎপর রয়েছে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
ঈদ ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।’