বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতাসহ রাজনৈতিক নির্লিপ্ততায় দলের প্রধান নেতা এখন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত এই চেয়ারম্যান দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। সেখানে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন এবং বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে একরকম বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তারেক জিয়ার বিত্ত-বৈভবের কোনো শেষ নেই, বিপুল সম্পদের মালিক তিনি। আর দেশে তার আপাতত আসার সম্ভাবনাও নেই। আর ব্যক্তি তারেকের এসব বিত্ত-বৈঠবের মাঝেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিকভাবে তারেক জিয়ার ভবিষ্যৎ কী?
২০০১ সালে বিএনপিতে নিশ্চিতভাবে বলা হচ্ছিল যে, খালেদা জিয়ার পর তারেক জিয়ার হাতে যাচ্ছে বিএনপির প্রধান নেতৃত্ব। সে সময়েই তারেক জিয়ার উত্থান। খালেদা জিয়ার বিকল্প প্যারালাল একটি রাজনৈতিক পরিকাঠামো বিএনপিতে গঠন করেন। তার নিজস্ব পছন্দের লোকজনকে তিনি মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে তিনি সরকার এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেন আসার পর প্রথমে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং পরে তারেক জিয়া নিজে গ্রেফতায় হয়। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারেক রাজত্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দলের নাম বিএনপি। এ সময়ে বিএনপি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত পড়ে। বিশেষ করে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায় সরাসরি তারেককে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গেও তারেক জিয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে একাধিক তদন্ত রিপোর্টে এসেছে।
এরকম বাস্তবতায় তারেক জিয়ার লন্ডনে বসেই বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আর এ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আসলে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি? এক সময় তারেক জিয়া ছিলেন বিএনপির একচ্ছত্র নেতা। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারেকের দলের মধ্যে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও জনপ্রিয়তা থাকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক মনে করা হতো। আর ২০২১ সালে এসে তারেক জিয়া তার নিজের দলে এখন সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
বর্তমানে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে না বললেও গোপনে তারা স্বীকার করেন যে, তারেক জিয়া যতদিন বিএনপিতে থাকবেন, ততদিন বিএনপির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারেক একাধিক মামলায় দণ্ডিত। কাজেই সহসা তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। দেশে ফিরলেও তিনি কিছু করতে পারবেন, এমন সম্ভাবনাও খুব একটা নেই।
রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সামনাসামনি করতে হয়। কারাগারের ভয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা, নিজের মায়ের অসুস্থতা শুনে খবর না নেয়া এবং রাজনৈতিক দলকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, টাকা আদায়ের মতো ঘটনা দলের মধ্যেও তারেক জিয়ার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই তারেক জিয়া এখন দলে, দলের বাইরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অগ্রহণযোগ্য একটি নাম। এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
