logo
Thursday , 6 April 2023
  1. সকল নিউজ

এনআইডি সংশোধন ঝুলে আছে সাড়ে ৫ লাখ আবেদন, বাড়ছে ভোগান্তি

প্রতিবেদক
admin
April 6, 2023 9:40 am

প্রযুক্তির ব্যবহারে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে বিশ্ব, ঘরে বসেই প্রায় সব সমস্যার সমাধান পাচ্ছে মানুষ। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম চালু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কার্যক্রমের শুরুর দিকের অবস্থা কিছুটা সুখকর হলেও সেটাই এখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ এনআইডি সংশোধন আবেদন ঝুলে আছে। আনলাইনে সহজ পদ্ধতিতে আবেদনের মাধ্যমে সহজ সমাধানের কথা বলা হলেও হচ্ছে উল্টো। আবেদনের পর কোন ক্যাটাগরিতে তা আটকে থাকছে সে বিষয়ে জানতে পারছেন না আবেদনকারী। ফলে দিনের পর দিন সুরাহা মিলছে না এসব আবেদনের।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অঞ্চলভেদে ঢাকা বিভাগে ৬৮ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৬ হাজার, বরিশালে ১২ হাজার, কুমিল্লায় এক লাখ ৮ হাজার, ফরিদপুরে ৩৩ হাজার, খুলনায় ৪৮ হাজার, ময়মনসিংহে ৫৩ হাজার, রাজশাহীতে ৪৯ হাজার, রংপুরে ৩৩ হাজার এবং সিলেটে প্রায় ৪৮ হাজার এনআইডি সংশোধন আবেদন আটকে আছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ‘গ’ শ্রেণিতেই (ক্যাটাগরি) প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

 

জানতে চাইলে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. দুলাল তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, বড় সংখ্যক আবেদন পেন্ডিং আছে- বিষয়টি এমন নয়। আমাদের ভোটার সংখ্যাও তো অনেক। আমাদের তো প্রচেষ্টা রয়েছেই। মানুষ তো নিত্য নৈমত্তিক তার তথ্য আপডেটের জন্য আবেদন করে, এটা পেন্ডিংয়ের (অপেক্ষমাণ থাকার) বিষয় নয়। এটা চলমান এবং প্রতিনিয়ত ডিসপোজাল (নিষ্পত্তি) হচ্ছে। যদিও এটা আমাদের জন্য একটা এক্সট্রা বার্ডেন (বাড়তি বোঝা)। তবে যেহেতু জনগণের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই আমরা সারাক্ষণই এই কাজগুলো করি। বেশিরভাগই দেখা যায় ভুয়া আবেদন আসে। কেউ মুক্তিযোদ্ধাকে শ্বশুর বানানোর জন্য কাগজ বানায়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তেরও বিষয় আছে। জমির দলিল, মামলা- এ ধরনের নানা বিষয় থাকে। এসব সাব জুডিশিয়াল কার্যক্রম, রাতারাতি এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। এ কারণে সময় লাগে।

জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই ও সরবরাহ) প্রবিধানমালা ২০১৪ এর প্রবিধি ২(৫) অনুযায়ী, এনআইডি সংশোধন আবেদনের ক্ষেত্রে ৪টি শ্রেণি (ক্যাটাগরি) করা হয়েছে। ‘ক’ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা-থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, ‘খ’ ক্যাটাগরির আবেদনের জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ‘গ’ ক্যাটাগরির আবেদনের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ‘ঘ’ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির জন্য এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রফিকুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। নিজের নামের বানানের একটি অক্ষর ভুল হওয়ায় সংশোধনের আবেদন করেছিলেন অনলাইনে। ১০ কার্যদিবস পার হলেও আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় ইসিতে যান তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সমস্যার সমাধান করেন।

 

জাগো নিউজকে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার নামের একটি অক্ষর হয়তো তাদের (ইসি) টাইপিং মিসটেকের জন্যই ভুল হয়েছে। কিন্তু সেটি সংশোধন করতে আমার এত কষ্ট করতে হলো! আমি অনলাইনে আবেদন করেছি, সার্টিফিকেটসহ সব ডকুমেন্ট দিয়েছি। তারপরও আমার নির্বাচন অফিসে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সমস্যার সমাধান করতে হলো। নির্বাচন অফিসেই যদি আসতে হয়, তাহলে অনলাইনে আবেদন করে লাভ কী?

এনআইডির তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলক্রমে নিজের পুরো নামের পরিবর্তনে ডাকনাম ব্যবহার করেছেন সুমন আহমেদ। এমন ভুলের কারণে চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে পড়েছেন জটিলতায়। সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন সংশোধনের। তবে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় নির্বাচন অফিসে ঘুরে জানতে পারেন ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আটকে আছে তার আবেদন।

জাগো নিউজকে সুমন আহমেদ বলেন, আবেদনের পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান না পেয়ে যখন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গেলাম আমাকে বলা হলো ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আমার আবেদন রয়েছে। আমি জানতে চাইলাম, আবেদন কেন আটকে আছে? তবে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে আরও কয়েকদিন নির্বাচন অফিসে গিয়েও সমাধান মেলেনি। সবশেষ পরিচিত এক মাধ্যম দিয়ে এনআইডি সংশোধন করি।

 

জানা গেছে, অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদন কোন শ্রেণিভুক্ত হয়েছে তা জানতে পারেন না আবেদনকারী। এ সংক্রান্ত কোনো মেসেজও তার কাছে যায় না। কল সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানার সুযোগ থাকলেও প্রচারণার অভাবে এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত নয়। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাধ্য হয়েই সারাসরি নির্বাচন অফিসে যেতে হয় আবেদনকারীকে। কারণ, অফিসে না গেলে বছরের পর বছর আবেদন ঝুলে থাকে, কোনো সুরাহা মেলে না।

‘ক’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে কাগজ ঠিক থাকলে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও অন্য ক্যাটাগরিতে জটিলতায় পড়তে হয় আবেদনকারীদের। বিশেষ করে সার্টিফিকেট না থাকলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবেদনকারী অফিসে না গেলে তার করা অনলাইন আবেদন খোলাই হয় না। এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তিতে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় এ ধরনের সমস্যা বেশি হচ্ছে। আইনের ফাঁক-ফোকর কাজে লাগাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ফলে বছরের পর বছর ফাইল পড়ে থাকছে।

রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কুমিল্লায় পেন্ডিংয়ের সংখ্যা এক লাখ হবে না। কুমিল্লা জোনে লোকসংখ্যা অনেক, এখানে এক কোটি ৬০ লাখ ভোটার। আমাদের কাছে ‘ক’ ক্যাটাগরির তিন লাখ আবেদন জমা পড়েছে, তারমধ্যে ২ লাখ ৮৫ হাজার নিষ্পত্তি হয়েছে। ‘খ’ ক্যাটাগরির ৫৬ হাজার আবেদনের মধ্যে ৩৫ হাজার নিষ্পত্তি হয়েছে। ‘গ’ ক্যাটাগরির ৪৭ হাজার আবেদনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ হাজার। এছাড়া ‘ঘ’ ক্যাটাগরির যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে ডকুমেন্টস দেওয়ার জন্য বলা আছে। এই কাজগুলো খুব জটিল।

 

তিনি বলেন, মানুষ জাল জন্মসনদ দিচ্ছে, জাল পাসপোর্ট দিচ্ছে, জাল সার্টিফিকেট- এমনকি জাল এনআইডি দিচ্ছে। তারা মনে করেন আমরা কিছু দেখি না, কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ চেক করি। ‘ঘ’ ক্যাটাগরি খুব জটিল, বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই ধরনের ৪৭ হাজার আবেদনের মধ্যে ৫ হাজার তো সেন্ড ব্যাক টু সিটিজেন (আবেদনকারীর কাছে ফেরত পাঠানো) আছে। সেখানে যেগুলোই বাতিল করি, দেখা যায় পরদিন আবার তারা আবেদন করেন। আবেদনকারী চান এনি হাউ (যেকোনো উপায়ে) সংশোধন করে নেবেন। কিন্তু কাগজপত্রে তো সেটি প্রমাণ করতে পারেন না। এরপরও আমরা দ্রুত সময়ে সব আবেদন নিষ্পত্তির চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালনা পরিচালক মো. ইউনুচ আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে সেই অনুযায়ী আমরা এ পর্যন্ত ২৪ লাখ আবেদন সংশোধন করেছি। এরপরও বিভিন্ন শ্রেণির কিছু আবেদন পেন্ডিং আছে। তবে সেটা সাড়ে পাঁচ লাখ আবেদন নয়, অনেক কম।

তিনি বলেন, আবেদনের ক্ষেত্রে কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে তো সেগুলো ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা মাঝেমধ্যে সংশ্লিষ্ট অথরিটিকে চিঠিও দেই। কিন্তু এনআইডি যেভাবে সংশোধন করতে চায় মানুষ, সেক্ষেত্রে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস অনেক সময় জমা দেন না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে যেসব কাগজ চাওয়া হয়, তারা সেই বিষয়গুলো বোঝেন না।

 

মো. ইউনুচ আলী আরও বলেন, অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে দেখা যায় নিজের ফোন নম্বর না দিয়ে দোকানির (যেখান থেকে আবেদন করেন) ফোন নম্বর দিয়েছেন। এমন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। হেয়ারিংয়ে ডাকা হলে দেখা যায় অনেকেই আসছেন না। আবার জটিল আবেদন বাতিল হয়ে গেলে তারা আবারও আবেদন করেন। যেটা (সংশোধন) হওয়ার যোগ্য না এমন আবেদন দুই তিনবারও করে থাকেন। এসব কারণে মূলত কিছু আবেদন আটকে থাকে। বর্তমানে পেন্ডিং আছে এমন আবেদনের সঠিক পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, এটি হয়তো দুই লাখের বেশি হবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত