logo
Wednesday , 5 April 2023
  1. সকল নিউজ

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড : পরিকল্পিত নাশকতা, সন্দেহ ব্যবসায়ীদের

প্রতিবেদক
admin
April 5, 2023 9:21 am

বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে। এমন সন্দেহ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক বি এম হাবিব অভিযোগ করে বলেন, ‘জমি ফাঁকা করার জন্য অগ্নিসংযোগ বা নাশকতার ঘটনা হতে পারে এটা। কারণ দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল এমন অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।’

এদিকে আগুনে সব হারিয়ে দোকান বুঝে না পাওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার পর এমন দেখা গেছে যে, যারা প্রকৃত দোকানি, তারা আর দোকান ফেরত পাননি। অন্য কেউ তা দখল করে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে কীভাবে দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যায়, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।

অনন্যা শাড়িঘরের মালিক সঞ্চয় ও সাধন দুই ভাই। তাদের দুটি দোকান ছিল। দুটিই পুড়ে গেছে। দুই দোকানে কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মালামাল ঈদ উপলক্ষ্যে ভারত থেকে আমদানি করা। কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই ছাই হয়ে গেছে। তারা বলেন, এখন আমাদের একটাই ভয়, দোকান ফিরে পাব কি না। নতুন করে শুরু করতে পারব কি না। কারণ এর আগে যেখানে এমন অগ্নিকাণ্ড হয়েছে, সেখানকার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। জায়গা কেউ না কেউ দখল করে নেন। বঙ্গবাজারে যেন সেই অবস্থা না হয়, তার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।

রিটে আটকা নতুন ভবন নির্মাণ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটিতে করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৯৩১টি বৈধ দোকান ছিল। এই হিসাবের বাইরেও অসংখ্য দোকান গড়ে উঠে মার্কেটটিতে। কাঠ, টিন ও বাঁশ দিয়ে গড়ে উঠা এসব দোকান এমন ঘিঞ্জিভাবে গড়ে উঠেছিল যে, ভেতরে হাঁটার জায়গা ছিল না মার্কেটে। বহুবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়ার পরও সেখানে ছিল না জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা। ছিল না অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও।

এর আগে ১৯৯৬ সালে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল পুরো মার্কেট। আরো কয়েক বার আগুনে পুড়ে মার্কেটটি। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস মার্কেটটিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মার্কেটটিতে ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কমপ্লেক্স ভেঙে এখানে ১০ তলা অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই মার্কেট রক্ষা করতে হাইকোর্টে রিট করেন। এতে মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটেই চলে বেচাকেনা।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মার্কেট সমিতি নতুন ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে এবং হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। এতে সিটি করপোরেশনের আইনি প্রক্রিয়ার কারণে কিছু করার ছিল না।’ করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঐ সময় সিটি করপোরেশনের এক জন কাউন্সিলরের যোগসাজশে আদালতে মার্কেট নির্মাণের বিরুদ্ধে রিট করেন ব্যবসায়ীরা। যার কারণে তখন মার্কেট নির্মাণ আটকে গেছে। কারণ এই মার্কেটে অবৈধ দোকানকেন্দ্রিক একটি চক্রের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল।

দ্রুত পুনর্বাসন দাবি :বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাদের সম্পদ বলতে অবশিষ্ট আর কিছু নেই। এখন উচিত হবে, সরকারি পর্যায় থেকে দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে এসব ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন করা। ব্যবসায়ীদের মনে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে এই জায়গা তারা আবার ফিরে পাবেন কি না। এই জায়গা ফিরে না পেলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’ বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখানে যারা ব্যবসা করেন, তারা ব্যাংকঋণ নিয়ে আবার ব্যবসায় ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তাই তাদের জন্য সরকার থেকে থোক বরাদ্দের দাবি জানাব আমরা, যাতে ব্যবসায়ীরা দ্রুত এখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টাটা অন্তত করতে পারেন।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ