logo
Sunday , 26 February 2023
  1. সকল নিউজ

চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের সুফল নিতে চান বিদেশিরা

প্রতিবেদক
admin
February 26, 2023 9:09 am

গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব আয় থেকে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। গত ১২ বছরে এই খাতে মোট ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে। বিপুল এই অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছে এই বিনিয়োগ। যে কারণে বন্দরের পরিচালনা কার্যক্রম ব্যবসার দিকে নজর পড়েছে অনেকের। নানা মহল এই খাতের ব্যবসাকে নিজেদের কবজায় নিতে চায়।

জানা গেছে, নানা মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের করটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজটি থেমে নেই। সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে, বন্দরের প্রাণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিটিসি) বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে একটি চক্র। এক্ষেত্রে এনসিটিকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর মাধ্যমে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বন্দর খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের মতো এ রকম একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি বয়ে আনবে, সেই সঙ্গে দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে। বিশেষ করে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানোর প্রচেষ্টা চলছে, সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত সরকার সে দেশের বন্দরগুলো চালানোর জন্য বিদেশি কোম্পানি নিয়োগ দিলেও পরবর্তী সময়ে তাদের সেখান থেকে বিদায় করা হয়েছে।

সম্প্রতি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য করণীয় ঠিক করতে এক বৈঠক আহ্বান করা হয়। পিপিপি কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষ এবং অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত এই সভায় খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে এনসিটিকে পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী প্রস্তাবটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এনসিটিকে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে নানা মহল থেকে বিরোধিতাও আসছিল। বন্দরে কর্মরত শ্রমিকেরা লিফলেট ছড়িয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিলেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, এনসিটি পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর এটি অর্থনীতিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সেখানে এটি পাশ হলে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি নিয়োগ করা হবে। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে পিপিপিতে চালানোর, কিন্তু সেটির প্রক্রিয়া অনেক লম্বা। তিনি জানান, বন্দরের জন্য যে কোনো প্রস্তাব যদি লাভজনক না হয়, তাহলে তা গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।

অন্যদিকে, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসিকে এই প্রকল্পের জন্য ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আইএফসি তাদের ওয়েবসাইটে এ ঘোষণা জানিয়ে বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগের জন্য সংস্থাটি সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষকে পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও হস্তান্তরের বিষয়ে অ্যাডভাইজরি সহায়তা দেবে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা এ কাজ শেষ করবে বলে জনিয়েছে।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালে বিদেশি কোম্পানি নিয়োগ করা হলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। বিশেষ করে টার্মিনালগুলোর আশপাশে নৌ ও বিমানঘাটি থাকায় এ বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে বলে তারা জানান। এছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলো স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যেমে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাবে, যা এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি। এছাড়া গত কয়েক বছরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি করছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আদায় যেমন বেড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশও সহজ হয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারীদের কয়েক জন ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক সৃষ্টি শুরুতে খুব সহজ ছিল না। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর পেছনে নৌ মন্ত্রণালয়, বন্দরের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে।  চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষ বন্দরে পরিণত হয়েছে কর্তৃপক্ষের কিছু ইতিবাচক ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, বন্দরের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে সেখানে ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। একসময় বন্দরে মোট ৪৯ হাজার ১৮ টিউজ কনটেইনার রাখা যেত। এখন সেটির সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮টিউজ। তিনি জানান, বর্তমানে বন্দরে ৩৪ হাজার ২২৬ টিউজ কনটেইনার রয়েছে। শ্রমিকেরা এখন বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকায় কথায় কথায় ধর্মঘট নেই বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত