এবার সরকারি হাসপাতালে বসেই ব্যক্তিগত চেম্বারের মতো রোগী দেখার সুযোগ পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। অফিস সময়ের পর আলাদাভাবে প্রস্তুত চেম্বারের রোগী দেখবেন। প্রাইভেট হাসপাতালের মতোই এখানে ফি দিয়ে রোগীরা সেবা নিতে পারবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু করতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্প চালু হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকার বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের মত নিয়েছে। কাজটি শুরু করতে দ্রুতই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ১ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করতে চাচ্ছি। পাইলট প্রকল্প হিসাবে ৫০টি উপজেলা, ২০টি জেলা ও পাঁচটি মেডিকেল এর আওতাভুক্ত থাকবে। এতে রোগীরা বেশি চিকিৎসা পাবেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চিকিৎসকরা ডিউটি সময়ের বাইরে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে চেম্বার খুলে রোগী দেখেন। এই বিশেষ সুবিধার ফলে সরকারি কর্মস্থলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চেম্বারের মতো রোগী দেখতে পারবেন। কাজটি শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে। কতক্ষণ, কীভাবে প্র্যাকটিস করবেন, সেটি বাস্তবায়নে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা আমাদের অবহিত করবেন।’
ফি বেশি হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাইরে তারা যে ফি (চিকিৎসক) নেন, সেক্ষেত্রে নিজের প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই কম ফি নেবেন বলে আশা করি। চেম্বারে বসে যে পরামর্শ দেওয়া হয়, সেগুলো তারা দেবেন। সেটা অফিসের কর্মঘণ্টার পর। সেখানে কাজ করার জন্য অবশ্যই তাদের তাগিদ দেব। তারা অগ্রাধিকার পাবেন। জাহিদ মালেক বলেন, ‘নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন। যাবতীয় কাজ যা আছে, তা আগে সম্পন্ন করবেন। এর বাইরে যদি সময় পান, তাহলে তারা কাজ করবেন। এখানে সময় দিলে সেভাবে বাইরে সময় দিতে পারবেন না। এখনো তো তারা বাইরে প্র্যাকটিস করেন।’
সরকার দেশের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিনিয়ত উন্নয়নের চেষ্টা করছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চোখের কর্নিয়া ও কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সেখানকার সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সম্প্রতি তারা লিভার প্রতিস্থাপনও করেছেন, যেটি একটি মাইলফলক। মানুষ এসব চিকিৎসার জন্যই বিদেশে যায়।’
‘মৃত্যুর পর যদি কিডনিটা দিয়ে যেতে পারেন, সেটা যদি মৃত্যুর আগে বলে যান তাহলে অন্য একজন মানুষের জীবন রক্ষা পেতে পারে। একজন ব্যক্তি মারা গেলে কয়েক ঘণ্টা পর কিডনি অকেজো হয়ে যায়। তাই সেটি দান করে গেলে অন্তত একজনের জীবন বাঁচাতে পারেন। আমরা চাচ্ছি, কিডনি প্রতিস্থাপন আরও জোরদার হবে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রলিভারেও কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করছি’ বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভাগভিত্তিক জায়গাগুলোতে যে সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। বরিশাল বিভাগে গিয়ে যে সমস্যাগুলো দেখেছি, সেগুলো সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। তবে সঠিক তদারকি হলে ভালো কাজ হবে। আমাদের দুর্বল জায়গা হলো উপজেলার হাসপাতালগুলো। ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিলেও ঘাটতি কমেনি।’
সভায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।