logo
Sunday , 18 December 2022
  1. সকল নিউজ

দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না, আ.লীগের বিজয় র‌্যালিতে নেতারা

প্রতিবেদক
admin
December 18, 2022 9:41 am

বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ ও স্বাধীনতাকে নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই মাসে শপথ নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও নির্মূল করতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে আওয়ামী লীগের বিজয় র‌্যালি-পূর্ব সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।

৫১ বছর আগে যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করেছিল, তার সামনে থেকে বিকাল পৌনে চারটায় আওয়ামী লীগের বিজয় র‌্যালি শুরু হয়। শাহবাগ, কাঁটাবন, বাটার মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিজয় র‌্যালিতে অংশ নেওয়া সব মানুষের কণ্ঠে ছিল একই দাবি-‘বিজয়ের এই দিনে, মুজিব তোমায় মনে পড়ে’, ‘মুজিবের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’।

মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকান দূতাবাস, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো টানাপোড়েন হলে কূটনৈতিকভাবে তা ফয়সালা করব। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দূতাবাসকে আশ্বস্ত করছি-কূটনীতিকদের জন্য নিরাপত্তার কোনো অভাব বাংলাদেশে নেই। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সবাই নিরাপদে থাকবেন। আজকে যদি কোনো টানাপোড়েন হয়, তার বিচার চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আপনারা এটা বলার কে?

সেতুমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খুনিদের পরাজিত করব। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে। খেলা হবে, খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে খেলবে, নির্বাচনেও খেলবে। সেমিফাইনাল সামনে। তারপর ফাইনাল খেলা। ফাইনালে আন্দোলনেও তারা হারবে। নির্বাচনেও হারবে ইনশাআল্লাহ। 

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১০ তারিখে লাল কার্ড দেখায়া দিছে। কি পাইছে? পাইছে অশ্বডিম্ব। ৩০ তারিখেও ঘোড়া ডিম পাড়বে। যদি তারা সফল হয়, ঘোড়া সেদিন ডিম পারবে। ২৪ তারিখের গণমিছিল ৩০ তারিখে নেওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান কাদের। তিনি বলেন, ২৪ তারিখে আমাদের জাতীয় সম্মেলন। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। ফলে তারা গণমিছিল ৩০ তারিখে নিয়ে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনোদিকে কান দেবেন না। 

বিজয় র‌্যালিতে ব্যাপক জনসমাগমের কারণে নিজে গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি মোটরসাইকেলে করে এসেছি। জনগণ, স্লোগান আর স্লোগান। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যার সব ঢেউ এসে পড়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আজকের এই উত্তাল সমাবেশে। সবাই প্রস্তুত। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মানুষ অন্নের নিশ্চয়তা পেয়েছে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা পেয়েছে। তারা বাসস্থান পেয়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই, আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট না দেয় আমরা সালাম করে চলে যাব। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা শপথ নিচ্ছি তোমাদের শিকড় আমরা উপড়ে ফেলব ইনশাআল্লাহ।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান বলেন, আজ বিএনপি-জামায়াত ভেঙচি মারে। আওয়ামী লীগ কোনো বানরের ভেঙচিতে ভয় পায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ডা. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীতে লাখো মানুষ সঙ্গে নিয়ে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি করল আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনি এলাকা, ৪১টি থানা এবং শতাধিক ওয়ার্ড থেকে মিছিলের স্রোত নামে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের কমিটি সামনে রেখে নিজ নিজ শক্তির মহড়া দেখিয়েছেন নেতারা। পিছিয়ে ছিলেন না সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও। পাড়া-মহল্লা, থানা-ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন তারা। যুবলীগের পতাকা ও মাথায় ক্যাপের মিছিল দৃষ্টি কাড়ে সবার।

ঢাকা-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৩ আসনের এমপি নসরুল হামিদ, ঢাকা-১১ আসনের এমপি একেএম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। এমপিদের পাশাপাশি শোডাউনে দেখা গেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর, বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সাবেক নেতাদেরও।

অর্ধশত মিনিট্রাক নিয়ে শোডাউন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক। অর্ধশতাধিক ঘোড়ার গাড়ি এবং হাতি নিয়ে শোডাউন করেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। নানা রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বড় শোডাউন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. সাইদুল ইসলাম মাদবর, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী, ঢাকা উত্তর সিটির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রকৌশলী তৈমুর রেজা খোকন। ২০-এর অধিক মিনিট্রাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অসংখ্য কাগজের কামান, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়েও মিছিলে শামিল হয়েছিলেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল।

৩২টি পিকঅ্যাপ ভ্যানে নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আশিকুর রহমান চৌধুরী লাভলু। বিশাল লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে শোডাউনে যোগ দেন শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে বিশাল পতাকা মিছিল করে যুবলীগ। আলেয়া সরোয়ার ডেইজী ও শারমিন সুলতানা লিলির নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগ, কামরুল হাসান রিপন ও তারিক সাঈদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ বিশাল শোডাউন করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি মিছিল যোগ দেয়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ