রাজনৈতিক বিরোধ ও চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় খুন হয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন হাওলাদার।
নিহতের স্বজনদের দাবি, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাই কামাল গাজী। সহযোগীদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ভান্ডারিয়া থানায় মামলা করেন নিহতের ছেলে মো. মেহেদি হাসান রাজীব। একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
মামুন হাওলাদারের স্ত্রী নিলুফা বেগম বলেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধে সিদ্দিকুর রহমান ও তার সহযোগীরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
নিহতের ছেলে সাকিব হোসেন ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বাবার হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে বাড়িতে এসেছেন তিনি। সাকিব হোসেন বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাই কামাল গাজীর বিরোধ চলছে। সিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাই কামাল গাজী তাদের অনুসারী উজ্জল মোল্লা, মামুন, রাজু, রনি বিশ্বাস, জালাল মোল্লা ও শাহীন মিলে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এজন্য তাদের মামলার আসামি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও সেনেরহাট এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে আমার বাবার ওপর হামলা করেছিলেন তারা। তখন রক্ষা পেয়েছিলেন। তারা ছাড়া বাবার কোনও শত্রু ছিল না। আমার বাবার বাধার কারণে এলাকায় চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারতেন না তারা।’
নিহত মামুন হাওলাদারের বড় ভাই খালেক হাওলাদার বলেন, ‘আমরা পুলিশ সুপারের কাছে হত্যার বিচার চেয়েছি। এ ঘটনায় মামলা করেছি।’
সিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাই কামাল গাজীর সহায়তায় তাদের অনুসারীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সিকদার।
দেলোয়ার জাতীয় পার্টির (জেপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গাজী সিদ্দিকুর একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। সিদ্দিকুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামুন হাওলাদার তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। মামুন হাওলাদারের বাড়ি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। দুজনের বাড়ি দুই ওয়ার্ডে হলেও কাছাকাছি এলাকায় বসবাস। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সিদ্দিকুর রহমান, তার ভাই কামাল গাজী এবং তাদের লোকজন চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। মামুন এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতেন। এ কারণে তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন তারা।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুন হাওলাদারের আগে একই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন বাচ্চুকে প্রায় ২০ বছর আগে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। সে ঘটনায় করা মামলায় জেল খেটেছেন কামাল গাজী।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তার ভাই কামাল গাজী এলাকায় নেই।
এর আগে সোমবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভিটাবাড়িয়া গ্রামে মামুন হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত মামুন হাওলাদার (৫০) শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের মেহনাজ হাওলাদারের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি ভাড়া মোটরসাইকেলে শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার সময় পথরোধ করে মামুনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় মামুনের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন করে ঘটনাস্থলের পাশের ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার মুখ বিকৃত করে দেওয়া হয়। ওই সময় মামুনের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালক সজলকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় সজলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্বশত্রুতা রয়েছে বলে ধারণা করছি। ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
ভান্ডারিয়া থানার ওসি মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ভান্ডারিয়া থানায় হলেও ইউপি সদস্য মামুন ও হত্যায় অভিযুক্তরা কাউখালী থানার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের বাসিন্দা। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মামুন হাওলাদারকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক সজল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি আমরা।’