পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে অন্তত ১০টি দেশের সংগে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চিন। এ চুক্তি স্বাক্ষরের যৌক্তিকতা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে দাখিল করা আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদনটির হলফনামা করা হয়। আগামীকাল বুধবার তা বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে সুইস সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বাংলাদেশ সরকার। গত ১০ অগাস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত একথা বললে পরদিন বিভিন্ন দৈনিক এনিয়ে খবর প্রকাশ করে। প্রকাশিত এসব খবর নজরে এলে গত ১১ অগাস্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকার ও দুদকের কাছে এর ব্যাখ্যা চান আদালত। সুইস রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু বিএফআইইউ’র অর্থপাচার সংক্রান্ত তথ্যের প্রতিবেদন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে আদালতে দাখিল করায় গত ৩০ আগস্ট বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করেন হাইকোর্ট। পরদিন বেলা ১১টায় আদালতে হাজির হয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। আদেশ অনুযায়ী গত ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাস আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবেদন দাখিল করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেদিন আদালত ২৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে এ সময়ের মধ্যে মাসুদ বিশ্বাসকে আরেকটি প্রতিবেদন দিতে বলেন।
এগমন্ট গ্রপ্রের সদস্য হিসেবে বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থপাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কি তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, প্রদিতবেদনের মাধ্যমে তা জানতে চান উচ্চ আদালত। আদালতে উপস্থাপন করতে সে প্রতিবেদনটিই হলফনামা করে দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করা ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রস্তাবিত গবেষণা সেলে লোকবল পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করার পর তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সংশ্লিষ্ট মামলায় তথ্য-প্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে পাওয়া যায়নি। যে কারণে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভা গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ছয় থেকে সাতটি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) স্বাক্ষরের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিএফআইইউ এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ সভা করার পর বিএফআইইউ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে সভা আয়োজনের অনুরোধ করে। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ চুক্তির যৌক্তিকতা এবং কোন কোন দেশের সঙ্গে এমএলএ চুক্তি করতে হবে তা জানতে চায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ ১০টি দেশের নাম উল্লেখ করে চুক্তির যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সংক্রান্ত কৌশলপত্র/প্রতিবেদন গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২৬তম সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল। কমিটির পরবর্তী সভায় বিষয়টি অনুমোদন পাবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছে বিএফআইইউ।