logo
Sunday , 16 October 2022
  1. সকল নিউজ

মধুমতি সেতু চালুর পর পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বাসী

প্রতিবেদক
admin
October 16, 2022 8:37 am

দেশের প্রথম ৬ লেনের মধুমতি সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছেন।
গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করেন। ওই দিন রাত ১২ টার পর থেকে মধুমতি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করে। এ সেতু দিয়ে বোনাপোল বন্দর, নওয়াপাড়া নদী বন্দর, যশোর, নড়াইল, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ করে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের দূরত্ব ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে মধুমতি সেতু। এ অঞ্চলের মানুষ এখন দিনে দিনে রাজধানী ঢাকার কাজ সেরেই বাড়ি ফিরতে পারছেন। এ সুফল পেয়ে খুশী এ অঞ্চলের মানুষ। তারা এ সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারা প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামের গৃহবধূ মেহেরুন্নেছা বলেন, গত ২৫ জুন পদ্মা নেতু চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা এই সেতুর সুফল পাচ্ছিলাম না। আমাদের ফরিদপুর হয়ে দৌলৎদিয়া দিয়ে ঢাকা যাতায়াত করতে হত। এখন মধুমতি সেতু চালু হয়েছে। এ সেতু পার হয়ে আমরা পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা যেতে পারছি। এতে আমাদের ১০৯ কিলোমিটার পথ কমেছে। ঢাকা যাতায়াতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। দিনে দিনে কাজ সেরে বাড়ি পৌছাতে পারছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

যশোরে গদখালী এলাকার ফুল চাষী মোতালেব মোল্লা বলেন, আমরা সারা বছর ফুলের চাষ করি। ফুলের সবচেয়ে বড় মার্কেট ঢাকা। আগে দৌলৎদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে ঢাকায় ফুল পাঠাতাম। তখন খরচ বেশি হত। এখন মধুমতি সেতু চালু হয়েছে। ঢাকার সাথে আমাদের দূরত্ব কমেছে প্রায় ২ শ’ কিলোমিটার। এখন পদ্মাসেতু হয়ে দ্রুত ঢাকার বাজারে ফুল পাঠাতে পারছি। এতে পরিবহন খরচ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা সদরের জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞান শিক্ষক কমলেশ পোদ্দার (৮৪) বলেন, আমি কাশিয়ানী উপজেলা সদরে বসবাস করি। আমাদের স্বজনদের বাড়ি নড়াইল ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে। সেই সুবাদে কালনাঘাটে গিয়ে মধুমতী নদী পার হয়ে অনেকবার নড়াইল, যশোর গিয়েছি। আগে যাতায়াতের সময় খেয়া নৌকা পার হতে হত। তখন গ্রীস্মকালে ঝড় উঠত। নদী উত্তাল হয়ে যেত। দুর্ভোগে পরতে হত। এরপর ২০০০ সালের দিকে ফেরী চালু হল। একটা মাত্র ফেরী চলাচল করত। তাই ফেরী ওপারে থাকলে এ পাড়ে গাড়ি নিয়ে ফেরী পারপার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা কালনা ঘাটে বসে থাকতে হত। এমনও দিন গেছে ফেরী ঘাটে ফেরীর জন্য ৩ চার ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে। কল্পনা করতে পারিনি এখানে ব্রিজ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে ব্রিজ করে দিয়েছেন। এখন নড়াইল ও যশোর সহজে যাতায়াত করতে পারছি। দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার শার্সাকান্দি গ্রামের প্রমথ রঞ্জন মৃধা (৮৫) বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় কালনা খেয়াঘাট পার হয়ে ভারত গিয়েছিলাম। তারপর বেশ কয়েকবার কালনা খেয়া পার হয়েছি। খেয়াপারে এখানে দুর্ভোগ ছিল। কারণ মধুমতি নদী তখন খুবই খর¯্রােতা ছিল। নদীপার হতেই ঘন্টা কেটে যেত। পরে দুর্ভোগ কমাতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালে ফেরী চালু করে। ২০০১ সলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষতায় আসে। তার ফেরী সার্ভিস বৃদ্ধি করেনি। একটি ফেরী দিয়ে পারাপার করা হত। ফেরীর অপ্রতুলতার কারণে এখানে পারাপারে দুর্ভোগ লেগেই থাকত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ফেরী সার্ভিস বৃদ্ধি করে। নানা কারণে ফেরী বিকল হতে শুরু করে। পরে সচল মাত্র একটি ফেরী দিয়ে পারপার করা হত। এজন্য মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। চিকিৎসার জন্য কালনা ঘাট পার হয়ে বেনাপোল দিয়ে ভারত যাতায়াতের সময় এ দুর্ভোগ ছিল নিত্য সঙ্গী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে এ সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতু নির্মিত হয়েছে। এখন এ সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারছি কালনা ঘাটে আমাদের আর দুর্ভোগ নেই । এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের বাসিন্দা ও ফুকরা মদন মোহন একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোঃ জইন উদ্দিন (৫৮) বলেন, যশোর, বেনাপোল, নওয়াপাড়া, ঝিনাইদহ. মাগুরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আমাদের যাতায়াত ছোট বেলা থেকে। কারণ চাচাসহ আত্মীয় স্বজনরা ওই সব জেলায় চাকরি করতেন। তাই ওইসব জেলায় যাতায়াত করতে আমাদের কালনা ঘাট পার হতে হত। কালনা ঘাটে গিয়ে খেয়া বা ফেরীরর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে। দুর্ভোগের কোন শেষ ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিজ করে দিয়েছেন। তাই যত সময় ঘাটে বসে থাকতে হত তত সময়ের মধ্যে আমরা যশোর, বেনাপোল পৌছে যেতে পারছি। ভারতে যাতায়াতকারীদের ভারত যাতায়াত খুব সহজ হয়েছে। গোপালগঞ্জে চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, মধুমতি সেতু চালু হয়েছে। এ

সেতু দ্রুত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার অর্থনীতির চাকা গতিশীল করে তুলবে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী অংশে নতুন নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা, হোটেল রেস্তেরা গড়ে উঠেছে। এছাড়া এই অঞ্চলে আরো নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। মধুমতি নদীর চরে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এই অঞ্চলের মানুষের আর্থসমাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি নদীর গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা সীমান্তের কালনা পয়েন্টে এই সেতু নির্মিত হয়েছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

মধুমতি সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত