logo
Sunday , 16 October 2022
  1. সকল নিউজ

ডিসেম্বরে খুলছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল

প্রতিবেদক
admin
October 16, 2022 8:37 am

যৌথ অর্থায়নে সরকারের গৃহীত বড় মেগা প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম দু’টি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাল্টিলেন রোড টানেল নির্মাণকাজ শেষপর্যায়ে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে টানেলটি খুলে দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে টেকনাফের ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ শেষে কক্সবাজারে স্বপ্নের ট্রেন যাচ্ছে পরের বছরের ডিসেম্বরে। এমনটিই আশা করছেন দুই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। এ দুটো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

মেগা প্রকল্প দুটোর কাজের শুরুতেই হানা দেয়া করোনা মহামারী ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল ও রেলপথ নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকগণ যথাক্রমে প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী ও মফিজুর রহমান। ইতোমধ্যে টানেল প্রকল্পের কাজ ৯১ ভাগ ও রেলপথ প্রকল্পের কাজ ৭৫ ভাগ কাজ এগিয়েছে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালকগণ।

টানেল নির্মাণে প্রকল্প সহায়তা রয়েছে পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং সরকারের রয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৮৩ একর। যৌথ ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় ও চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

২.৪৫ কিলোমিটার ও দুইপ্রান্তের তীরসহ টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪ কিলোমিটার আর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এই প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ৯.৩৩ কিলোমিটার। আর প্রতিটি টিউবের ভিতরের অংশে প্রশস্ত হচ্ছে প্রতিটি ১০.৮ মিটার করে।

আনোয়োরা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি উড়াল সড়ক বা ফ্লাইওভারসহ ৫.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন সড়ক নির্মিত হবে যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হবে। অপর প্রান্তে ০.৫৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মিলিত হচ্ছে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে মূল সড়কের সাথে। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং একই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের সময় ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। রেলপথ দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমানার ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে চার হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় দুই ভাগে। প্রথম ভাগে বা লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় ভাগের বা লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে।

এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানি। দ্বিতীয় লটের রামু- কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেলপথ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহুল প্রত্যাশিত এ দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এশিয়ান কানেকটিভিটি যেমন জোরদার হবে সেই সাথে আশানুরূপ ভাবে ত্বরান্বিত হবে দেশের পর্যটন শিল্প তেমনিভাবে দেশের জিডিপিতেও একটি বিশাল অঙ্ক যুক্ত হবে এ দু’টি মেগা প্রকল্প থেকে।

অপর দিকে এ দু’টি মেগা প্রকল্প ঘিরে পালটে যাচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে কক্সবাজার ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কোল পাওয়ার প্ল্যান, বিশালাকারের শিল্পজোন গড়ে উঠছে পর্যটন শিল্পসহ নানা বৃহৎ প্রকল্প। এ দুটো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে যানবাহনের চাপ সামলাতে (ট্রাফিক ভলিয়মের ওপর নির্ভর করে) বাস্তবায়ন করা হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় পাঁচ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। যৌথ অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চারটি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ প্রকল্প কাজ এখন শেষপর্যায়ে রয়েছে। অপর দিকে মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস নির্মাণ প্রকল্প কাজের ডিপিপির তৈরির কাজ চলমান (প্রায় ২৫.১ কিলোমিটার)। এ ছাড়া দিয়ে ৩.৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার (সম্ভাব্য ব্যয়) ব্যয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিনড্রাইভ (প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার) প্রকল্প কাজের সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে (যেহেতু ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে টানেল) আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮.১ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজের মধ্যে আপাতত চার লেনের কাজ সম্পন্নের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য মাল্টিলেন রোড টানেল সংযোগ সড়কের সাথে যুক্ত হওয়া মহাসড়ক উন্নীতকরণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে এ নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই কাজে নিয়োজিত ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট প্রধান সৈয়দ আবদুল হান্নান বলেন, প্রকল্পের কাজের মধ্যে ২১টি বক্সকালভার্টের মধ্যে ১৪টি গতকাল পর্যন্ত শেষ হয়েছে। অপর সাতটির কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট বক্সকালভার্ট ও তিন কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সর্বশেষ - সকল নিউজ