logo
Thursday , 13 October 2022
  1. সকল নিউজ

রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছা অবসর ঘোষণার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের অযাচিত আলোচনা, নেপথ্য কারণ উন্মোচন

প্রতিবেদক
admin
October 13, 2022 9:11 am

২০১৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ই জানুয়ারি ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, সেইসাথে তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেসব প্রসঙ্গ উঠে আসে সাক্ষাৎকারে। শেখ হাসিনা জানান তিনি এ নিয়ে মোট ৪ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি চান এবার নতুন কেউ নেতৃত্বে আসুক। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা নেই তাঁর। এই কথাটি পরবর্তীতে আরও কয়েকবার তিনি তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন। জানালেন, তিনি বিশ্রাম চান। নতুন কাউকে নেতৃত্বভার নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণ এবং বাংলাদেশকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার তাঁর অবদান নিয়ে কোনো দ্বিমত নাই দেশের সাধারণ মানুষের। তাঁর অর্জন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের বুক ফুলিয়ে পদচারনা মানুষ দেখতে পাচ্ছে। একসময় বিদেশ সফরে গিয়ে খালি হাতে ফিরতো যেই দেশ আজ সেই দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনার।

রাজনৈতিক কারনে, মতাদর্শগত ভিন্নতায় সবার কাছে আওয়ামী লীগ পছন্দের দল হবে না, এটাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটাই বাস্তবতা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলকে স্বাধীনতাবিরোধীরা পছন্দ করবে না, এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের আজকের অবস্থানের পেছনে শেখ হাসিনার অবদান, রাজনীতির ভেতরে-বাইরে কোন সুস্থ চিন্তার মানুষ, কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ পারে।

শেখ হাসিনা এমন এক ইমেজ নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাঁর দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, বিবেচনাবোধ, সৌজন্যতা প্রদর্শন ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত। আর সেই ইমেজকেই একটি গোষ্ঠী ভীষণভাবে ভয় পায়। তারা ভাবে শেখ হাসিনাকে হঠিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। শেখ হাসিনাই যেন তাদের ক্ষমতার পথে বড় বাধা।

 

[রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছা অবসর ঘোষণার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের অযাচিত আলোচনা, নেপথ্য কারণ উন্মোচন]

এই বাধা দূর করতে বিরোধীদলগুলো অনেকদিন ধরেই নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। গ্রেনেড, গুলি, বোমা, দেশবিরোধী প্রচারনার চক্রান্ত সব কিছুও যখন ব্যর্থ হলো তখন শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তিনি তো অবসরে যেতে চেয়েছিলেন। ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারের কথাগুলো এমনভাবে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে, যেন প্রধানমন্ত্রীর এত পরিশ্রম দেখে তাদের ‘মাসির দরদ’ জেগে উঠেছে!

তাদের ধারনা শেখ হাসিনা সরে গেলে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে যাবে, তাতেই যেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। বিরোধীদের ধারণা, শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির যে ওজন, তা সমগ্র আওয়ামী লীগের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তাঁর জায়গায় আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতা উঠে এলেও তেমন জনপ্রিয়তা পাবে না, জনসমর্থন পাবে না এবং নির্বাচনী বৈতরণী পার করা হয়ে উঠবে না। এসব ভেবেই তারা শেখ হাসিনাকে ঠেলেঠুলে অবসরে পাঠানোর একটা হাইপ তৈরি করতে চাইছে।

বিরোধীদলগুলোর মতোই যতটা না এই চেষ্টা করছে, তারচেয়ে বেশি খেটে মরছে গণমাধ্যমগুলো। পুরোদস্তুর কোমর বেঁধে উঠে-পড়ে লেগেছে তারা। ডয়চে ভেলে, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ দেশের কয়েকটি শীর্ষ গণমাধ্যম। ভিজিটর বাড়ানোর ধান্ধায় ক্লিকবেইট সংবাদ প্রকাশ করছে যেখানে শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর কোন মিল নাই।

 

যেমন ডয়চে ভেলে শেখ হাসিনার একটি ছবি ব্যবহার করে স্লাইডে লিখেছে- “বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত, আমার সময় হয়ে গেছে।” তারা জনগণকে বোঝাতে চাইলো, বিরোধীদলগুলোর আস্ফালনে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছেন! উসকানি প্রদানের জন্য তারা যেন নৈতিকতাই বিসর্জন দিয়েছে।

যারা মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করছেন তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, সত্যি যদি শেখ হাসিনা নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে? একটু বিশ্লেষণের দিকে যাওয়া যাক।

গণতন্ত্রের মূল যে বার্তা, বাংলাদেশে তার চর্চা থাকলে দুশ্চিন্তার কারণ থাকত না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তা হতে দেয়নি। তাদের আমলে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা গাড়িতে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করে এই দেশকে পাকিস্থান বানানোর চেষ্টা করেছে। সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। বুকের সাহসকে সম্বল করে জনগণকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা সেই শকুনদের জেলে পুরলেন, ফাঁসিতে চড়ালেন। এই অর্জন ইতিহাসে চিরকাল লেখা থাকবে।

রাজাকারনির্ভর দল বিএনপি সোজা পথ ছেড়ে বেছে নিয়েছিল চোরাপথ। আগুন সন্ত্রাস আর মানুষ মারার ভয় দেখিয়ে তারা কাবু করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে। তাঁর কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারছে। এই আনন্দ আর গর্বের দিন দেখে যেতে পারবেন জীবদ্দশায়, অনেকেই ভাবেননি। তিনি তা করে দেখিয়েছেন। কী করে তাঁকে রাজনীতি থেকে বিদায় বলা সম্ভব? কিন্তু বাস্তবতা হলো তাঁর বয়স বাড়ছে। কেউ কেউ তাঁর বিকল্প হিসেবে তাঁর বোন কিংবা সন্তানদের কাউকে চাইছেন। তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব চলে যাক- এটা কেউই চান না। পরিবারের বাইরে দলের নিয়ন্ত্রণ যাবার মত সময়ও হয়নি। কারণ, সেই ভরসার জায়গাটা ক্ষীণ। যতদিন ঐক্য আর বলিষ্ঠতার দরকার ততোদিন শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো পারলে আজই শেখ হাসিনাকে ফেয়ারওয়েল জানিয়ে দেয়!

 

[রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছা অবসর ঘোষণার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের অযাচিত আলোচনা, নেপথ্য কারণ উন্মোচন]

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সেখানে নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে। শেখ হাসিনা দলের সভাপতির পদে থাকবেন কি না- এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চায় তাহলে আমি থাকব না। চলে যাব। একজন কাউন্সিলর চাইলেই পদ ছেড়ে দেব। আমি দলীয় পদ থেকে বিদায় নিতে প্রস্তুত। আমিও চাই আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসুক।” তিনি নিজেই জানেন দলের নেতৃত্ব পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে হবে। গণমাধ্যমের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না তাঁকে এই কথা মনে করিয়ে দেওয়া। বিরোধী দল গুলো নিজেদের মনের আকাঙ্খা মেটাতে অনেক কথাই বলে, বলবে। গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো যদি বিএনপি-জামাতের মতো কলংকিত রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো আচরন করে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করাই দুরাশা।

শেখ হাসিনার কাছে সাধারণ মানুষের অনুরোধ একটাই, তিনি যেন এমন কাউকে মনোনীত করেন, যার কাছে দেশ ও প্রগতিশীলতা নিরাপদ। তাঁর বিকল্প নেই- এটা যেমন সত্য, তিনি চিরকাল নেতৃত্ব দিতে পারবেন এটাই তেমনই সত্য। দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমী নাগরিকের মতো আমাদেরও আশা এমন একজনকে তিনি উত্তরসূরি হিসেবে রেখে অবসরে যাবেন, যিনি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার দলের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পারবেন। যিনি বাংলাদেশকে বর্তমান অবস্থানের চেয়ে আরও ওপরে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হবেন। তার আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার হাত শক্ত রেখে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক সবার লক্ষ্য।

সর্বশেষ - সকল নিউজ