বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সব ধরনের মামলাজট কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসাই এখন বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘মানুষ এখন শুধু ন্যায়বিচারই চায় না, তারা দ্রুত বিচার চায়। জনগণের এই চাওয়াটাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, মূল্য দিতে হবে।’
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (জাতি) যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মামলাজটের পরিসংখ্যান বলে, দেশের আদালতগুলোতে দায়েরকৃত সিভিল মামলার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি সম্পর্কিত। অনেক ফৌজদারি মামলার মূলেও রয়েছে ভূমি বিরোধ। এসব মামলার বিচার পাওয়ার জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীকে আদালতে ধরনা দিতে হয়। এতে যে কেবল তাদের সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে তা নয়, মূল্যবান কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে। যেসময়ে তাদের উৎপাদনের কাজে থাকার কথা, সেসময় আদালতের বারান্দায় ঘুরেঘুরে বিচার পাওয়ার প্রহর গুণতে হচ্ছে।
তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি আশা করবো, বিজ্ঞ বিচারকরা এসব বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেবেন এবং জনগণকে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদান করে তাদের বিচার পাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব করবেন।’
বিগত প্রায় সাড়ে ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সমৃদ্ধ অর্থনীতির শত্রু হিসেবে খ্যাত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায়। কারণ ঋণ খেলাপি মামলাজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে আমাদের অবশ্যই ঋণ খেলাপি মামলাজট খুলতে হবে এবং এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ বাড়ার লাগাম টানতে হবে।’
ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধন করে আদালতের বাইরে এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মামলার পক্ষগণের অনাগ্রহের কারণে এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না। ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে- এডিআর পদ্ধতিকে আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপণ রোধ করতে হবে।’
মানুষের চাওয়া মতো দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্ব এখন বদলে গেছে। উন্নত দেশগুলোতে দ্রুত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত সেবা প্রদান করছে। তাই জনগণকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কাজের গতিও বাড়াতে হবে। তা না হলে বিচার বিভাগ পিছিয়ে পড়বে।’
‘সরকার দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং মাদক এর বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং মাদক সংক্রান্ত মামলার বিচারকালে অত্যন্ত সজাগ থাকবেন এবং প্রতিটি মামলার সকল পর্যায়ে সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে আইনানুগভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।