logo
Wednesday , 7 September 2022
  1. সকল নিউজ

শক্তি ও সক্ষমতা বাড়ছে হাইওয়ে পুলিশের

প্রতিবেদক
admin
September 7, 2022 8:38 am

শিগগিরই হাইওয়ে পুলিশকে দেখা যাবে নতুন চেহারায়। বদলে যাবে খোলনলচে। উন্মোচিত হবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। এজন্য বিপুল শক্তি ও সক্ষমতার গতিতে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটকে অত্যাধুনিক করা হচ্ছে।

বলা যায়, মহাসড়কের অতন্দ্র প্রহরী হবে হাইওয়ে পুলিশ। এ উদ্দেশ্যে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটের জনবল চারগুণ করা হচ্ছে। কেনা হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ যানবাহন এবং বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি। দেশব্যাপী কার্যক্রম বাড়ানোর অংশ হিসাবে হাইওয়ে পুলিশের বিদ্যমান ৫টি অঞ্চলের সঙ্গে নতুন করে আরও ৩টি হাইওয়ে অঞ্চল বা রিজিয়ন যুক্ত করা হচ্ছে।

পাশাপাশি এই বাহিনীর জন্য নতুন ৭২টি থানা স্থাপনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। এছাড়া মাদারীপুরের শিবচরে একটি অত্যাধুনিক ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। সারা দেশের ১ হাজার ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ককে হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর এবং হাইওয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাইওয়ে পুলিশের জনবল আরও তিনগুণ বাড়িয়ে বর্তমানের তুলানায় প্রায় চারগুণ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ২ হাজার ৮৭৪ জন জনবলের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আরও ৮ হাজার ১১২টি নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের জনবল কাঠামোতে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপি, পাঁচজন ডিআইজি, নয়জন অতিরিক্ত ডিআইজি, নয়জন এসপি, পাঁচজন অতিরিক্ত এসপি, ১২ জন এএসপি এবং অন্যান্য পদমর্যাদার সদস্য আছেন ২ হাজার ৮৭৪ জন। জনবল বাড়ানোর যে প্রস্তাব বিবেচনাধীন তাতে যুক্ত করা হয়েছে একজন করে ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি, আটজন এসপি, ২৭ জন অতিরিক্ত এসপি, ছয়জন এএসপি এবং ৮ হাজার ৭৯ জন অন্য পদমর্যাদার সদস্য রয়েছেন। প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো অনুমোদন হলে হাইওয়ে পুলিশের মোট জনবল হবে ১০ হাজার ৯৯৬টি।

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নতুন ১ হাজার ৩০০ যানবাহন কেনার প্রস্তাব দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। এছাড়া এই বাহিনীর জন্য বিপুলসংখ্যক সরঞ্জামাদি কেনার প্রস্তাবও বিবেচনাধীন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২২টি জেলায় হাইওয়ে পুলিশের কোনো স্থাপনা নেই। তবে নতুন তিনটি রিজিয়নের মাধ্যমে এসব জেলায় হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহ রিজিয়ন অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া নতুন ৭২টি থানার প্রস্তাব করা হয়েছে। থানাগুলো হলো-কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ, বাবরাং ও মহেশখালী হাইওয়ে থানা, রাঙামাটির সদর ও কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা, বান্দরবানের চিম্বুক ও নীলাচল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, নওগাঁর মান্দা, পত্নীতলা ও নওহাটা, বগুড়ার মহাস্থানগড় ও শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, জয়পুরহাটের কালাই, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, রংপুরের কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, লালমনিরহাটের আদিতমারী, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, সদর ও ঘোড়াঘাট, ঠাকুরগাঁও সদর, নীলফামারীর জলঢাকা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে কাঞ্চন, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও এলেঙ্গা, গাজীপুরের চন্দ্রা, নরসিংদীর ঘোড়াশাল, ময়মনসিংহের শম্বুগঞ্জ ও মুক্তাগাছা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, শেরপুরের গৌড়দ্বার, ফরিদপুরের মুন্সীবাজার, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও ভাটিয়াপাড়া, শরীয়তপুরের জাজিরা, বাগেরহাটের মোল্লারহাট, খানজাহান আলী ও মোংলা, সাতক্ষীরা সদর, ঝিনাইদহের আরাপপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়ার গড়াই, চুয়াডাঙ্গার সদর ও দর্শনা, মেহেরপুর সদর, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, যশোরের খাজুরা, পিরোজপুর সদর, ঝালকাঠির গাবখান ও দপদপিয়া, ভোলার বাংলাবাজার ও চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী ও কুয়াকাটা, বরগুনার আমতলী, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, সিলেটের চারখাই, ফেঞ্চুগঞ্জ ও ভোলাগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দাবাদ হাইওয়ে থানা। প্রতিটি থানা ভবন হবে ছয় তলা ভিতবিশিষ্ট চতুর্থ তলা ভবন। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন।

হাইওয়ে পুলিশের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, মাদারীপুরের শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদীর পারে পাঁচ একর জমির ওপর একটি অত্যাধুনিক ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেনিং সেন্টারের জন্য ১৩৫ জনের জনবল কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন একজন ডিআইজি (কমান্ড্যান্ট)। এছাড়া একজন অতিরিক্ত ডিআইজি (অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট), দুইজন এসপি, চারজন অতিরিক্ত এসপি, চারজন অতিরিক্ত এএসপি ও ১২৩ জন অন্যান্য পদমর্যাদার পুলিশ ও নন পুলিশ সদস্য।

সূত্রমতে, মহাসড়কগুলোকে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় আনার অংশ হিসাবে ১ হাজার ১৪ কিলোমিটার মহাসড়কে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি। এজন্য পাঁচটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে হাইওয়ে পুলিশ। প্রকল্পের আওতায় আছে পোস্তগোলা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ২২৩ কিলোমিটার, ঢাকা থেকে সিলেট ২৩৯ কিলোমিটার, আমিনবাজার থেকে হাটিকুমরুল ১৬০ কিলোমিটার, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ১৭২ কিলোমিটার এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার মহাসড়ক। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় সিসিটিভি স্থাপনের কাজ চলমান।

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০৪১ এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল সামনে রেখে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে, এসএএসইসি হাইওয়ে, বিমসটেক করিডর এবং বিবিআইএন হাইওয়ের কার্যক্রম চলমান। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দর, নির্মাণাধীন মহেশখালী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, সরকারি-বেসরকারি ১০০ ইকোনমিক জোন, নৌবন্দরগুলোর সংযোগ সড়ক, ২৪টি স্থলবন্দরের সংযোগ সড়ক এবং অনেক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় মহাসড়কগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মহাসড়কে যানবাহনের ক্রমাগত চাপ মোকাবিলা, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধ এবং কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালের ১১ জুন। সেসময় ২৪টি হাইওয়ে থানাসহ ফাঁড়ি ছিল ৪৮টি। ৩ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক এবং ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক হাইওয়ে পুলিশের অধিক্ষেত্র। বর্তমানে ৫টি রিজিয়ন, ১০টি সার্কেল এবং ৭৩টি থানা ফাঁড়ির মাধ্যমে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের বিশদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ