logo
Monday , 5 September 2022
  1. সকল নিউজ

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল গ্রহণের প্রত্যাশা

প্রতিবেদক
admin
September 5, 2022 8:36 am

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের সফরে আজ ভারত আসছেন। কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অনিষ্পন্ন ইস্যুসহ সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বাইরে বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত বৈঠক হবে। বাংলাদেশ ও ভারতে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে একান্ত আলোচনায় গণতন্ত্র, নির্বাচন কিংবা রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মতো বিষয়ে নেতারা কি আলোচনা করেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল রয়েছে। নির্বাচনের আগে দুদেশের শীর্ষ নেতাদের আর কোনো দ্বিপক্ষীয় সফরের সুযোগ কম।

এ সফরে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কূটনীতিকদের সাফল্যের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। কারণ তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ বেশি। কিন্তু এ বিষয়ে বড় কোনো অগ্রগতির সংবাদ এখনও জানা যায়নি। তবে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ ও সহযোগিতার জন্য দিল্লিকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এ বিষয়ে ভারতের সম্মতি পাওয়া গেলে জ্বালানি ইস্যুতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, ৩ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি আসছেন। এবারের প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুই নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর বিভিন্ন বিষয়ে অন্তত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারসহ ছয়টি নদীর পানি বণ্টন সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এছাড়া দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (সিইপিএ)-সেফা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যৌথ ঘোষণা দেওয়ার কথা আছে। সেই সঙ্গে ভারত যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনে একটি কাঠামো (সামরিক সরঞ্জাম কারখানা স্থাপন) চুক্তির জন্য জোর দিচ্ছে। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির বিষয়ে এই চুক্তিকে ভারত অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে উঠবেন ১৭১ জন, যাদের মধ্যে দেশের শীর্ষ কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে দুদেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও রয়েছে। ব্লু-ইকোনমিতে (সুনীল অর্থনীতি) সহযোগিতা এবং দুদেশের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম কর্তৃপক্ষের মধ্যে ইতঃপূর্বে স্বাক্ষরিত দুটি এমওইউ এবারের শীর্ষ বৈঠকের পর আবার নবায়ন করা হবে। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরসহ দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনায় রূপসা নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধন করতে পারেন।

আজ থেকে শুরু এ সফর সূচিতে আছে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং ৬৬০ মেগাওয়াট রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন। ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহিদ ও যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের মাঝে মুজিব স্কলারশিপ প্রদানের ঘোষণা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, এই সফর দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে এবং প্রতিবেশী ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল দেবে এবং বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষ্যে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বক্তব্য রাখেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সফরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে ফলপ্রসূ করতে কর্মকর্তারা ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের ও পরীক্ষিত। দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও টানা দুবারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে আসতেও পারে চমকপ্রদ কোনো ঘোষণা।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে উচ্চাশা ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, ‘শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত সফল হবে। এই সফর দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় রোববার যুগান্তরকে বলেন, দুদেশের সম্পর্ক মূলতঃ রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সৈনিকেরা রক্ত দিয়েছেন। এ সম্পর্ক কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। এই সম্পর্ক ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভারতের বিশেষ ভূমিকা থাকার দরকার।

দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, ভারতেরও এমন একটি ঘোষণা আছে।

তাই এই সফরে চমকপ্রদ কোনো ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত না এলেও যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে ও যৌথ বিবৃতি প্রকাশ হবে তাতে আগামী ২৫ বছরে দুদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রতিফলিত হবে বলে আমি মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচি : আজ সকাল ১০টায় রওয়ানা দিয়ে দিল্লির সময় দুপুর ১২টায় এখানকার পালাম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসে উঠবেন হোটেল আইটিসি মাওরায়। বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-এর দরগায় যাবেন। তিনি হোটেলে ফেরার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানী। এরপর তিনি বাংলাদেশ ভবনে গিয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরানের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন।

পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। সেখানে তারা ছবি তুলবেন। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখান থেকে তিনি হোটেলে ফিরে যাবেন, পরে আসবেন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষে নামাজের বিরতির পর দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। স্বাক্ষরের পর দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এরপর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যাহ্ন ভোজ। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধানকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেখান থেকে হোটেলে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যরা। এরপর তিনি তাদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন।

৭ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি মতবিনিময় করবেন এখানকার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এই মতবিনিময় সভার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। ওই দিন বিকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহিদ ও যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের হাতে মুজিব স্কলারশিপ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ সেপ্টেম্বর জয়পুর হয়ে আজমির শরিফ দরগায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সন্ধ্যায় জয়পুর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত