প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পিতা-মাতা ও ভাই হারিয়ে বুকে ব্যথা নিয়ে এগিয়ে চলছি। আমি সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছি। আমি কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমি বিচারে বিশ্বাসী।
এই চক্রান্তের নেপথ্যে কারা একদিন বের হবে। জানি না আমরা দেখে যেতে পারব কি না। আমি তো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি। ’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সংসদে সর্বোসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সরকারি দল ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য আলোচনায় অংশ নিলেও বিএনপির কেউ অংশ নেননি। এ সময় সংসদে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি শোক বুকে নিয়ে সেদিন দেশে এসেছিলাম মানুষের জন্য কিছু করতে। আমি বারবারই ভাবতাম, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। কারণ আমার বাবা এ দেশের মানুষের জন্য সারাটা জীবন উত্সর্গ করে গেছেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব। কিন্তু আমার চলার পথ সহজ ছিল না। মরার আগে আমি মরতে রাজি ছিলাম না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় বিচারে বিশ্বাসী। আমি কোনো দিন প্রতিশোধ নিতে চাইনি। আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছি। যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্টের চক্রান্ত শুধু আমাদের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়; আমাদের স্বাধীনতা, ঐতিহ্য ও আদর্শের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল, আমি বিশ্বাস করি একদিন বেরিয়ে আসবে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা নয়, একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অন্যায়-অবিচার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। ’
বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে অবাক লাগে যারা খুনিদের ক্ষমতা দিয়ে মন্ত্রী বানায়, গণতন্ত্রকে হত্যা করে সেনা শাসন আনে, এদের সঙ্গে কিভাবে অনেক মানুষ চলে গেল? আমরা বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমরা মামলা করতে পারিনি, বিচার চাইতে পারিনি। তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে গিয়ে কথা বলে। আর তারাই হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সেনাবাহিনীতে একের পর এক ক্যু হয়েছে। বহু সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের লাশ পায়নি। ঢাকা জেলে প্রতিদিন ১০-২০টা করে হাজার হাজার সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। মামলার নামে প্রহসন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরে মামলা দেওয়ার ঘটনাও হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে স্বাধীনতাবিরোধী ও যাদের আমরা পরাজিত করেছি, তাদের হাত ছিল। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছি। কিন্তু সমালোচনা অনেকে করে চলছেন। যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ না, সেখানে দেশের কিছু সংস্থা বলে যাচ্ছে আমাদের নাকি অনেক ঝুঁকি রয়েছে। ’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে বিদেশে পালিয়ে থাকাদের তথ্য তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নূর কানাডায় এবং আর একজন লিবিয়া ও পাকিস্তানে আসা-যাওয়া করে। ওই সব দেশ আমাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে; কিন্তু তারাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা মানবাধিকারের কথা বলে কিভাবে?’