পাকিস্তানের চলমান বন্যায় প্রাথমিক হিসাবে ১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির পরিকল্পনামন্ত্রী এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতি এতটা রূঢ় আচরণ করছে। তাই এর দায়বদ্ধতা কেউ এড়াতে পারে না। এ কারণে তিনি আবারও বিশ্বের কাছে এই দুর্যোগে তাদেরকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।দেশটিতে বন্যায় প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা তাদের ২২ কোটি জনসংখ্যার ১৫ শতাংশেরও বেশি। এই অবস্থাকে দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ভয়াবহ ‘মানবিক সংকট’বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, প্রাথমিক হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি ডলার হবে। তিনি বলেন, যেভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সামনে আসছে তাতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর আসছে। এ সংখ্যা এখন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এতে মানুষের বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতির কথা জানতে পেরেছি। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে মানুষ এখন তাদের জীবিকা হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে। কোথাও একটু খাবারের কথা শুনলে সেখানে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এবারের বন্যা ২০১০ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
সেসময় জাতিসংঘ তাদের সবচেয়ে বড় দুর্যোগসহায়তার আবেদন জারি করেছিল। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও পুনর্বাসন, পুনর্নিমাণে পাঁচ বছর লাগতে পারে এবং কিছুদিনের মধ্যেই তীব্র খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল জানিয়েছেন, খাদ্যঘাটতি মেটাতে প্রতিবেশী ভারত থেকে সবজি আমদানি করার কথা বিবেচনা করা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কোনো বাণিজ্য হচ্ছে না। জিও নিউ টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে সবজি আমদানির কথা বিবেচনা করতে পারি।’ পাশাপাশি তুরস্ক ও ইরানসহ খাদ্যের অন্যান্য উত্সগুলোও বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় ও সড়ক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাকিস্তানে এরই মধ্যে খাদ্যের পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেশ ত্রাণ সরবরাহ ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে সাড়া দিয়েছে। সোমবার চীন সরকার জানিয়েছে, তারা অতিরিক্ত মানবিক ত্রাণ হিসেবে আরো ৩ লাখ ডলার নগদ অর্থ ও ২৫ হাজার তাঁবু পাঠাচ্ছে। এর আগে পাকিস্তানকে ৪ হাজার তাঁবু, ৫০ হাজার কম্বল ও ৫০ হাজার ত্রিপল পাঠিয়েছে চীন। সোমবার কানাডার সরকারও পাকিস্তানের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৫০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।