logo
Friday , 26 August 2022
  1. সকল নিউজ

বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তায় অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

প্রতিবেদক
admin
August 26, 2022 3:43 pm

একদিকে কাজ না থাকা অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে শুধু খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি। তাছাড়া চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ঘটনা তো আছেই।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘যত বড়ই অপরাধী হোক, ক্যাম্পে ঠাঁই হবে না। সকল অপরাধীকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক এপিবিএন-দুই থানা পুলিশ সূত্র বলছে, শিবিরগুলোতে গত পাঁচ বছরে অন্তত ১১৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৭ জন, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ৪৯ জন, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তার মধ্য গত চার মাসে শুধু উখিয়া ক্যাম্পে ১২ জন খুন হন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, ২০১৮ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে ৪ হাজার ৭৪৮টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫০৫ জন রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী’কে আটক করা হয়েছে। তারা অধিকাংশ উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এছাড়া ৫০ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবাসহ ১৭ ’শ ৪৯ জন রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী আটক হন। তার বিপরীতে ১৫ ’শ ২৯টি মামলা উখিয়া-টেকনাফ থানায় রুজু করা হয়।

কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি মো. হারুন জানান, ‘রোহিঙ্গাদের একটি বড়ো অংশ বেকারত্ব নিয়ে দিন পার করছে। এ সুযোগে অপরাধীচক্রগুলো তাদেরকে দলে ভিড়চ্ছে। আবার অনেকে অভাবের কারণে অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে।’

জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অপরাধ বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বা পুনর্বাসনের ব্যাপারে আজও আমাদের জাতীয় কোনও নীতিমালা বা নির্দেশনাবলী নেই। ২০১৭ সালে মানবিকদিক বিবেচনা করে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা কিন্তু আরও দুই দশক আগে থেকেই দলে দলে আসতে শুরু করেছে। তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার ও শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন ঘোষণায় কিছু ব্যবস্থাপত্র থাকলেও আমাদের নিজস্ব কোনও পরিকল্পনা-পরিকাঠামো নেই। তাদের জন্য আলাদা আইন, বিধি বা নীতিমালা তৈরির কথাও ভাবা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কাজের সুযোগের অভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানো এই জনগোষ্ঠীর সাথে স্থানীয়দের তিক্ততা দিন দিন বাড়ছে। যার জেরে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক।

৮-এপিবিএন পুলিশের তথ্য মতে, গত দুই বছরে ক্যাম্প থেকে আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেলসহ ২৫৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ১২টি, এম-১৬ রাইফেল ১টি, দেশীয় অস্ত্র ২৩৫টি। এসময় ৬ ’শ গোলাবারুদসহ ৬৪৩ জনকে আটক করা হয়। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে এনে ক্যাম্পে মজুতকালে ২১ লাখ ৪ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর লম্বাশিয়া শিবিরের এআরএসপিএইচ কার্যালয়ে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ড এবং বালুখালীর ১৮ নম্বর শিবিরের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ নামের মাদ্রাসায় আরসা-বিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভী আকিজসহ ছয়জন খুন হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বাড়ায় শিবির এলাকায় সন্ত্রাসীরা কিছুটা কোণঠাসা হলেও তারা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়নি।

প্রতিনিয়ত অবস্থান ও কৌশল বদলে শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে তারা। গত অক্টোবর থেকে চালু হওয়ার স্বেচ্ছাপাহারা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে এর সাথে জড়িত রোহিঙ্গা নেতা ও সেচ্ছাসেবীদের আক্রমণ করে কয়েকজনকে মেরেও ফেলেছে সন্ত্রাসীরা।

৮-এপিবিএন এর আওতাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রতি রাতে প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া ১৪-এপিবিএনের অধীনে তিন হাজার ৫১৬ জন এবং ১৬-এপিবিএনের অধীনে তিন হাজার সাত শ স্বেচ্ছাসেবক একই কাজ করছে।

এ বিষয়ে ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সকল অপরাধী গ্রেফতারের অভিযান চলছে।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত