logo
Tuesday , 23 August 2022
  1. সকল নিউজ

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তাদের দুদকে তলব ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

প্রতিবেদক
admin
August 23, 2022 9:39 am

গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সোমবার তাদের তলবি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ২৫ আগস্ট ওই চার কর্মকর্তাকে সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম, দুই আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম। এর আগে গত ১ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে নথিপত্র চাওয়া হয়। ১৬ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের এক কর্মকর্তা অনুসন্ধান টিমের কাছে ১১ ধরনের নথিপত্র জমা দেন।

অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা, কোম্পানির ১৯৯৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের যাবতীয় তথ্য ও কোম্পানি পরিচালনার আইন ও বিধিসংক্রান্ত নথিপত্র তলব করা হয়েছিল সংস্থাটির কাছে। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের এ কোম্পানি থেকে ঋণ পাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে কিনা কিংবা পর্ষদ সদস্যদের কেউ ঋণ নিয়েছেন কিনা, নিলে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং ঋণের অর্থ কীভাবে তুলেছেন তা সংস্থাটির কাছে চাওয়া হয়েছিল।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৭ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শেয়ারের বিপরীতে কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে এবং কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে সেই তথ্য-উপাত্ত খাতওয়ারি ছক আকারে সাজিয়ে দিতে বলা হয়। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে কতগুলো বোর্ড সভা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতি সম্মানী কত এবং সভার কার্যবিবরণীর সত্যায়িত কপিও দিতে বলা হয়। ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কত এবং সেখান থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে কত শতাংশ বণ্টন করা হয়েছে তার বিবরণও চাওয়া হয়। এছাড়া ১৯৯৭-২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার পরিমাণ কত এবং এ খাত থেকে কত প্রকার ফি কীভাবে কর্তন করা হয়েছে-এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপিও চাওয়া হয়। একই সময়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কত এবং সেখান থেকে অর্থ বিতরণসহ কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু দলিলাদির সত্যায়িত কপি চেয়ে পাঠায় অনুসন্ধান টিম। তাদের চাহিদা মোতাবেক ১১ ধরনের নথিপত্র জমা দেয় গ্রামীণ টেলিকম।

অনুসন্ধান টিমের কাছ থেকে প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা ড. ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটি ওই অর্থ কোথায়, কীভাবে কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর করেছে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, এ সংক্রান্ত তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গ্রামীণ টেলিকমের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে। এসব প্রশ্নের জবাব পেতেই গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। তলবে হাজির হলে মুখোমুখি করে প্রশ্নগুলো করা হবে। আলোচিত এই অনুসন্ধান টিমের তদারক কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর কথা জানান। তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগসংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ