রাশিয়ার সহযোগিতায় পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ। এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের জ্বালানি সম্পদ ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব, রাষ্ট্রদূত ভার্জিনিয়া ই পামার এ আগ্রহের কথা জানান।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে রাষ্ট্রদূত পামার দুদেশের জ্বালানি সহযোগিতা সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার বিষয়ে তার সরকারের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনকে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের জ্বালানি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত পামার বাংলাদেশে দশটি কয়লা চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতিল করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এসময় ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বিভিন্ন মার্কিন প্রস্তাবের প্রশংসা করে বাংলাদেশের মতো দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে দুই দেশের যৌথ গবেষণা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সঞ্চয় ব্যবস্থা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ মডিউলার রিঅ্যাকটর প্রকল্প গ্রহণের উপর জোর দেন। জ্বালানি উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত পামারের সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা করেন এবং বলেন যে, এই অঞ্চলের দেশগুলির জ্বালানিশক্তি ভাগাভাগি করে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও পদক্ষেপকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে।
এদিকে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পৃথক এক আলোচনায় ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বেসরকারি খাতকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘এনার্জি গোলটেবিল’ অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি একথা বলেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর এটি ছিল উক্ত কাউন্সিলের প্রথম ইন-পারসন সভা। উপদেষ্টা তার বক্তব্যে দেশে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধানে, বিশেষ করে অফশোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে তাদের উৎসাহিত করেন।
উপদেষ্টা নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের গবেষণা ও উন্নয়নে মার্কিন বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
তিনি মার্কিন সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ মডিউলার রিঅ্যাক্টরের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিতরণে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং মার্কিন সংস্থাগুলো সেখানে বিনিয়োগের সুযোগগুলো অনুসন্ধান করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র -বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল গোলটেবিলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা পূরণে দু’দেশের জ্বালানি অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে তার সংস্থার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য বিজনেস কাউন্সিলের আসন্ন ‘এনার্জি টাস্কফোর্স’ একটি জ্ঞান-ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
এই গোলটেবিল আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম, শেভরন, চেনিয়ার, এক্সিলারেট এনার্জি, এক্সনমোবিল, জিই পাওয়ার, সানএডিসনসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট লেভেলের কর্মকর্তা এবং যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।