logo
Sunday , 24 July 2022
  1. সকল নিউজ

সময়মতো দাম পরিশোধ না করা থেকেই জটিলতার সূত্রপাত

প্রতিবেদক
admin
July 24, 2022 10:17 am

অনলাইনে সঠিক নিয়মে ট্রেনের টিকিট না কাটায় মহিউদ্দিন হাওলাদার নামের এক গ্রাহকের টিকিট বাতিল হয়ে যায়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর টিকিটের মূল্য পরিশোধ করেন তিনি। তবে নিয়মানুযায়ী ৮ কার্যদিবস লাগলেও মহিউদ্দিন তার টাকা ফেরত পান তিন দিনের মধ্যেই। বাংলা ট্রিবিউন-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুক করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধের নিয়ম আছে। ওই সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধ না করলে স্বাভাবিক নিয়মে ওই টিকিট অফলাইন ও অনলাইনে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হয়।

মহিউদ্দিন হাওলাদার নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তার টিকিট বাতিল হয়। এরপরও তিনি অভিযোগ জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে।

গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অধিদফতর গত ২০ জুলাই শুনানি শেষে বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) অনলাইন টিকিট বুকিং অপারেটর সহজ লিমিটেডকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা পরিশোধের নির্দেশ দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন মহিউদ্দিন হাওলাদার নামের এক গ্রাহক অনলাইনে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য চারটি টিকিট বুক করেন। যার আসন নম্বর ছিল ক-৯, ১০, ১১ ও ১২। তিনি সকাল ৮টা ৩৬ মিনিটে টিকিট বুক করেন।

নিয়ম হলো টিকিট বুক করার ১৫ মিনিটের মধ্যে এমএফএস (মোবাইল আর্থিক সেবা), ডেবিট, ক্রেডিট অথবা ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। মহিউদ্দিন হাওলাদার তার জন্য নির্ধারিত ৮টা ৫১ মিনিটের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করতে পারেননি। তিনি ৯টা ৩৭ মিনিটে টিকিটের জন্য নির্ধারিত ২ হাজার ৬৮০ টাকা বিকাশ করেন। এ কারণে তিনি টিকিট পাননি।

ওইদিনই সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে রেলওয়ের সাপোর্ট বিভাগে মেইল করে টিকিট না পাওয়ার বিষয়টি জানান মহিউদ্দিন। সকাল ১০টা ১৬ মিনিটে ফিরতি মেইলে তিনি যে টিকিট কেটেছেন সেটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে অনুরোধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাড়া দেওয়া সত্ত্বেও ১৯ জুলাই পর্যন্ত অভিযোগকারী (মহিউদ্দিন হাওলাদার) টিকিট কাটার স্বপক্ষে কোনও কাগজপত্র হাজির করেননি।

নিয়ম অনুসরণ না করে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও মহিউদ্দিন ১৪ জুন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন সহজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে (অভিযোগ নম্বর ৫৬৯৯/২২)।

তিনি অভিযোগ করেন, অনলাইনে চারটি টিকিট কেটে টাকা পরিশোধ করলেও তিনি টিকিট পাননি এবং পরে কাউন্টারে গিয়ে দেখেন তার টিকিট আরেকজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

তার আরও অভিযোগ ছিল কোনও পাসওয়ার্ড (ওটিপি—ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) ছাড়াই বিকাশ থেকে তার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, সহজ লিমিটেড গত ১৯ জুলাই মহিউদ্দিন হাওলাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত বক্তব্য (রিটেন সাবমিশন) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর জমা দেয়।

অধিদফতরের পক্ষে সহকারী পরিচালক (অভিযোগ) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ২০ জুলাই তারিখে তা গ্রহণ (রিসিভ) করেন। ওইদিনই শুনানি শেষে অধিদফতর রায় দেয়।

লিখিত বক্তব্য ঘেঁটে দেখা গেছে, মহিউদ্দিন হাওলাদার সঠিক সময়ে টিকিটের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তা সিস্টেমের নিয়ম অনুসারে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ১৬ নম্বর কাউন্টার থেকে (অপারেটরের আইডি নম্বর ডিএইচকে-০৩২) ক-৯ নম্বর টিকিট বিক্রি হয়, যে টিকিটটি মহিউদ্দিন হাওলাদার সঠিক সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে কিনতে পারেননি।

মহিউদ্দিন তার বিকাশ হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সহজ লিমিটেড লিখিত বক্তব্যে বলেছে, টিকিটের অর্থ পরিশোধের জন্য মহিউদ্দিন হাওলাদার নিজেই ওটিপি পাসওয়ার্ড ও পিনকোড দিয়েছেন। এগুলো ছাড়া বিকাশ থেকে টাকা পরিশোধ সম্ভব নয়। ফলে অনুমতি ছাড়া বিকাশ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের পরও টিকিটের মূল্য বিকাশ করা হলে সিস্টেম তা গ্রহণ করে। দেশে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড ফাইন্যান্সিয়াল প্রসিডিওর অনুযায়ী সহজ লিমিটেডের সঙ্গে রিকনসিলিয়েশনের পর বিকাশ কর্তৃপক্ষ মহিউদ্দিন হাওলাদারের বিকাশ হিসাবে ৩ দিনের মধ্যে (১৬ জুন) টাকা ফেরত দেয়। নিয়ম অনুযায়ী যা কিনা ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা। এমনকি ওই টাকা সহজ লিমিটেডের অ্যাকাউন্টেও জমা হয়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) অনলাইন টিকিট বুকিং অপারেটর সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন (এনএসভি) কনসোর্টিয়াম। এরমধ্যে সহজ হলো সহজ লিমিটেড, সিনেসিস হলো সিনেসিস আইটি লিমিটেড ও ভিনসেন হলো ভিনসেন কনসালটেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড।

সর্বশেষ - সকল নিউজ