কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে লড়তে বিএনপি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। জানিয়েছেন, অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে শেষবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন করবেন তিনি। ভবিষ্যতে আর নির্বাচন করবেন না। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এসব কথা জানান তিনি।
২০১২ সালে প্রথম কুসিক নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে একবার এবং ২০১৭ সালে বিএনপির মনোনয়নে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু।
গতকাল সন্ধ্যায় আলাপকালে মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবারই শেষ নির্বাচন। ভব্যিষতে আর নির্বাচন করব না। গত ১০ বছর ধরে মেয়রের চেয়ারে আছি। এ সময় অনেক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নকাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখনো অনেক কাজ বাকি। তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়ে অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে চাই। ’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। কুমিল্লার মানুষ, আমার কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আগামী ১৭ মে জমা দেব। আশা করছি ওই দিনই দলের পদ থেকে পদত্যাগ করব। ’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি দুই ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষে রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র সাক্কু। বিএনপির এই দুই নেতার বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্য। এবার কুসিক নির্বাচনে সাক্কু ছাড়া মাঠে রয়েছেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক। এরই মধ্যে কায়সার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সমান তালে তিনি মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নগরীর বাসিন্দাদের কাছে কায়সার এরই মধ্যে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন।
এরই মধ্যে নগরীতে আলোচনা চলছে, সাক্কুকে ঠেকাতে নির্বাচন করছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। গত দুটি নির্বাচনে সাক্কু ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থী ছিল না। এবার সাক্কুর বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থী থাকায় তাঁকে নির্বাচিত হতে বেগ পেতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘কুমিল্লার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন চায়। আমার নেতাকর্মী ও নগরবাসীর অনুরোধে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। সাক্কুকে ঠেকাতে ভোটে প্রার্থী হয়েছি, এ কথা ভিত্তিহীন। নগরবাসী আমাকে তাদের সেবক হিসেবে দেখতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ। ’
মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের নির্বাচন করার অধিকার আছে। কায়সার আমার ছোট ভাই। সে নির্বাচন করলে আমার তো কিছু বলার নেই। আমি নির্বাচনের জন্য মাঠ গুছিয়ে রেখেছি। প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে পুরোদমে মাঠে নামব। আশা করছি, অতীতের মতো কুমিল্লা নগরবাসী আমাকেই ভোট দেবে। ’